বনধে স্তব্ধ অসম ও উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্য,বিল বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত পরিস্থিতি

গুয়াহাটিঃ সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থা(আসু)এবং অন্যান্য ৩০ সংগঠনের ডাকা ১১ ঘণ্টা অসম বনধে মঙ্গলবার গোটা অসমের স্বাভাবিক জীবন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ সংসদে পাস করতে কেন্দ্ৰীয় সরকারের উদ্যোগের প্ৰতিবাদে এই বনধ ডাকে সংগঠনগুলি। বিলটি প্ৰত্যাহারের দাবিতে ডাকা এই বনধে অচল হয়ে পড়ে জনজীবন। উত্তর পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য রাজ্য মেঘালয়,নাগাল্যান্ড এবং অরুণাচল প্ৰদেশেও বনধের সর্বাত্মক প্ৰভাব পড়ে উত্তর পূর্ব ছাত্ৰ সংগঠন(নেসো)এই ধর্মঘটের প্ৰতি সমর্থন জানানোয়। গোটা ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় বনধের সমর্থনে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্ৰতিবাদকারীরা ভাঙচুরও চালায়। মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়ালের গৃহ শহর ডিব্ৰুগড়ে বিজেপি-র কার্যালয় তছনছ করে বনধ সমর্থকরা। ডিব্ৰুগড় শহরে উন্মত্ত প্ৰতিবাদকারীদের ছত্ৰখান করতে পুলিশ রবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। আজও রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে নাগরিক বিলের বিরুদ্ধে প্ৰতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠে বিভিন্ন সংগঠন।
গতকাল বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। দোকানপাট,যানবাহন ভাঙচুর,ট্ৰেন অবরোধ করারও রিপোর্ট পাওয়া গিয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশ ও নিরাপত্তা রক্ষীদের গাড়িও আটকে দেয় বনধ সমর্থকরা। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সমর্থকদের হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। কিছু গাড়ি চালককে বনধ সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হতে হয়। হিংসাশ্ৰয়ী ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ সাতটি মামলা নথিভুক্ত করেছে। বনধের ফলে ট্ৰেন সেবাও ব্যাহত হয়। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে বিভিন্ন ট্ৰেনের যাত্ৰা ও পৌঁছনোর সময় পুনর্নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়।
নিম্ন,মধ্য ও উজান অসমে সব সরকারি প্ৰতিষ্ঠান ও কার্যালয়,শিক্ষা প্ৰতিষ্ঠান,ব্যাংক,আর্থিক ও ব্যবসায়িক প্ৰতিষ্ঠান এদিন ছিল জনশূন্য। মহানগরী গুয়াহাটিতেও বনধের সর্বাত্মক প্ৰভাব পরিলক্ষিত হয়। মহানগরীর ফ্যান্সিবাজার,পানবাজার,লাখটোকিয়া,গণণেশগুড়ি এবং চান্দমারি সহ সব এলাকায়ই দোকানপাটের ঝাঁপ বন্ধ ছিল। মহানগরীর কিছু কিছু স্থানে যুবকরা এদিন রাজপথে ক্ৰিকেট খেলে বনধের সময়টুকু কাটাতে দেখা গিয়েছে।
ওদিকে বরাক উপত্যকায় বনধের প্ৰভাব ছিল আংশিক। বরাক উপত্যকার অধিকাংশ মানুষই নাগরিকত্ব বিলের প্ৰতি সমর্থন জানিয়েছেন। গোলাঘাটেও বনধের দিন প্ৰতিবাদকারীরা বিজেপি-র কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানোর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবারের এই বনধের প্ৰতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জ্নানোয় আসু অসমবাসীর প্ৰ্তি কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করেছে। আসু সভাপতি দীপাঙ্ক কুমার নাথ এক বিবৃতিতে বলেন,রাজ্যের মানুষ যে নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে তা বনধ সফল হওয়ায় এর প্ৰমাণ তুলে ধরেছে। ওদিকে নেসোও বনধ সফল করে তোলার জন্য নই অঞ্চলের জনগণের প্ৰতি ধন্যবাদ জানিয়েছে।
ত্ৰিপুরায় স্টুডেণ্টস ফেডারেশন ও বনধ সমর্থকদের ওপর পুলিশের গুলি চালনা ও নির্যাতনের কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে ছাত্ৰ সংগঠন নেসো। আজও দিশপুর কার্যালয়ের সামনে বিলবিরোধী আন্দোলন তীব্ৰতের হয়ে ওঠে। প্ৰতিবাদে শামিল হয় অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্ৰ পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন। বিক্ষোভকারীরা এদিনও যানবাহনের ক্ষতিসাধন করে। পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে পরিস্থিতি তাতিয়ে তোলার চেষ্টা করে যদিও পুলিশের বাধায় তা ভেস্তে যায় এবং পরিস্থিতি বাগে আসে। খবরে জানা গেছে রাজ্য বিজেপি সভাপতি রঞ্জিৎ দাসের নগাঁও সফরকালে আসুর তরফে তাঁকে কালো পতাকা দেখানো হয়। এর জন্য কয়েকজন আসু কর্মীকে গ্ৰেপ্তার করে পুলিশ। অন্যদিকে এসএফআই কর্মীরা রাজ্যের শাসক দলের সাতজন সাংসদের প্ৰতীকী শ্মশানযাত্ৰার কার্যসূচি রূপায়ণ করে।