মোদির মন্তব্যে বেজায় ক্ষুদ্ধ আসুর আন্দোলনের হুংকার

গুয়াহাটিঃ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬-র বিরুদ্ধে গোটা অসম যখন আন্দোলনে তাতিয়ে উঠেছে সে সময় বরাক উপত্যকায় শিলচরের মাটিতে বিজয় সঙ্কল্প সমাবেশে শুক্ৰবার ওই বিল পাসের প্ৰতিশ্ৰুতি দিয়েছেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি। সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থা(আসু)সহ রাজ্যের বিভিন্ন দল,সংগঠন মোদির ওই মন্তব্যের বিরুদ্ধে ফের গর্জে উঠেছে। দেশ ভাগ ও ধর্মীয় নিপীড়নের বলি হয়ে যে সব হিন্দু ভারতে আশ্ৰয় নিয়েছেন তাদের আশ্ৰই দিতেই ওই বিল আনা হচ্ছে বলে ভাষণে উল্লেখ করেছেন মোদি। প্ৰধানমন্ত্ৰীর এই অভয়দানে বরাক জুড়ে খুশির আবহ সৃষ্টি হলেও ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ ধূমায়িত হচ্ছে। সারা আসম ছাত্ৰ সংস্থা(আসু)বলেছে,প্ৰধানমন্ত্ৰী শিলচরে এমন মন্তব্য করে অসমিয়া জাতির সঙ্গে প্ৰতারণা করেছেন। আসু সাফ জানিয়েছে,এর জন্য বিজেপিকেই ভুগতে হবে।
শিলচরের রামনগরে শুক্ৰবার বিজেপি-র বিজয় সঙ্কল্প সমাবেশে প্ৰধানমন্ত্ৰী বলেছেন খুব শিগগিরই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ সংসদে পাস করার জন্য উত্থাপন করা হবে।
প্ৰধানমন্ত্ৰীর ওই মন্তব্যে প্ৰতিক্ৰিয়া ব্যক্ত করে আসুর মুখ্য উপদেষ্টা সমুজ্জ্বলকুমার ভট্টাচার্য দ্য সেন্টিনেলকে বলেন,প্ৰধানমন্ত্ৰী,কেন্দ্ৰীয় সরকার ও বিজেপি যে বাংলাদেশিদের রক্ষণাবেক্ষণ দিতে চাইছে সেটা এখন পরিষ্কারভাবেই প্ৰমাণিত। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬-র পক্ষে প্ৰধানমন্ত্ৰীর বিবৃতি থেকে এটা প্ৰমাণিত যে ভারা স্থানীয় খিলঞ্জিয়াদের স্বার্থের বিরোধী। ‘আমরা কোনও পরিস্থিতিতেই ওই বিল মেনে নেবো না। কারণ ওই বিলের মাধ্যমে অসম চুক্তিকে লঙ্ঘন করতে চাওয়া হচ্ছে। আমরা বিলের বিরোধিতা করে যাবো। আমাদের অবস্থান স্ফটিকের মতোই পরিষ্কার’। ১৯৭১ সালের আগে যে সব হিন্দু ও মুসলমান বাংলাদেশ থেকে অসমে এসেছেন তারা এ রাজ্যেই থাকবেন। কিন্তু ১৯৭১ সালের পর যারা অসমে ঢুকেছে তারা হিন্দু অথবা মুসলমান যে কোনও ধর্মের হোন না কেন তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে অসম ছাড়তেই হবে। ‘আমরা অসমকে কিছুতেই বাংলাদেশিদের ডাম্পিং গ্ৰাউন্ড বানাতে অনুমতি দেবো না’। ভট্টাচার্য আরও বলেন,বিজেপি হিন্দু-মুসলমান নিয়ে রাজনীতি করছে। বলেন,কেন্দ্ৰ ও রাজ্য সরকারকে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে অবৈধ বাংলাদেশিদের ডাম্পিং গ্ৰাউন্ড নয় অসম। ৭১ সালের পর রাজ্যে আসা একজনও অবৈধ বাংলাদেশির বোঝা রাজ্য নেবে না-সাফ জানিয়ে দেন তিনি। সমুজ্জ্বল আরও বলেন,সরকার যদি বলপূর্বক এই বিল অসমের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে জোরদার আন্দোলন শুরু করা হবে। বিজেপি-র মন্ত্ৰী,বিধায়ক সাংসদ কাউকেই রেয়াত করা হবে না।
পড়শি রাজ্য ত্ৰিপুরায় উদাহরণ তুলে ধরে সমুজ্জ্বল বলেন,ওই রাজ্যের ভূমিপুত্ৰরা এখন দ্বিতীয় শ্ৰেণির নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। ‘আমরা নিজেদের মাটিতে থেকে দ্বিতীয় শ্ৰেণির নাগরিকের জীবন নির্বাহ করতে পারবো না’। ভট্টাচার্য আরও বলেন ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় এটা শরাইঘাটের দ্বিতীয় যুদ্ধ উল্লেখ করে ভোট চেয়েছিল বিজেপি। তাহলে এটাই কি শরাইঘাটের দ্বিতীয় যুদ্ধ। বিলের বিরোধিতা না করায় আমরা মুখ্যমন্ত্ৰী সোনোয়ালেরও নিন্দা করছি। সাহস থাকলে মুখ্যমন্ত্ৰী এখনও এই বিলের বিরোধিতা করতে পারেন-বলেন সমুজ্জ্বল।
বিলের বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পরিকল্পনা আঁটছে আসু। সমুজ্জ্বল আরও বলেন,নির্বাচনের আগে বিজেপি ভূমিপুত্ৰদের স্বার্থেই কথা বলেছিল,কিন্তু এখন তারা বাংলাদেশিদের স্বার্থে কথা বলছে।
আসুর সভাপতি দীপাঙ্ক কুমার নাথ বলেন,অরুণ গৌরী সহ জাতীয় পর্যায়ের কিছু বুদ্ধিজীবী প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদিকে ফ্যাঁসিবাদী ও অগণতান্ত্ৰিক ও ঔদ্ধত্য আখ্যা দিয়েছেন। শিলচরে প্ৰধানমন্ত্ৰীর বক্তব্যেই তা প্ৰমাণিত। আসুর সাধারণ সম্পাদক লুরিনজ্যোতি গগৈ বলেন,প্ৰধানমন্ত্ৰী ওই বিবৃতি দিয়ে অসম আন্দোলনের শহিদদেরই অবমাননা করেছেন। এটা অসমের মানুষের সঙ্গে প্ৰতারণারই শামিল। মুখ্যমন্ত্ৰী সোনোয়ালকেও অত্যন্ত সু্যোগসন্ধানী বলে উল্লেখ করেন গগৈ।