ধারা বিস্ফোরণ মামলায় রঞ্জন সহ ১৪ অভিযুক্তকে দোষী ঘোষণা সিবিআই আদালতের

ধারা বিস্ফোরণ মামলায় রঞ্জন সহ ১৪ অভিযুক্তকে দোষী ঘোষণা সিবিআই আদালতের

গুয়াহাটিঃ ২০০৮ সালের ৩০ অক্টোবর অসমের বিভিন্ন স্থানে ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণ মামলায় মোট ১৫ জন অভি্যুক্তের বিরুদ্ধে বিচার প্ৰক্ৰিয়া চলার পর সিবিআই বিশেষ আদালতের বিচারপতিরা সোমবার এক ঐতিহাসিক রায় দেন। ওই রায়ে মামলার প্ৰধান অভি্যুক্ত ন্যাশনাল ডেমোক্ৰ্যাটিক ফ্ৰন্ট অফ বোড়োল্যান্ডের(এনডিএফবি)চেয়ারম্যান রঞ্জন দৈমারি সহ ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল সিবিআই-র বিশেষ আদালত। রায়ে আরও বলা হয়েছে দোষীদের কী সাজা দেওয়া হবে তা ঘোষণা করা হবে আগামি বুধবার। ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণ মামলার প্ৰধান অভিযুক্ত ছিলেন রঞ্জন দৈমারি। অভিশপ্ত ৩০ অক্টোবরের ধারা বিস্ফোরণে প্ৰাণ হারিয়েছিলেন ৮৮ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৫৪০ জন। গুয়াহাটির গণেশগুড়ি,পানবাজার এবং সিজেএম কোর্ট চত্বর সহ বরপেটা,কোকরাঝাড় ও বঙাইগাঁওয়ে প্ৰায় একইসঙ্গে এই ধারা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল।

মামলায় দৈমারি ছাড়াও অন্যান্য অভিযুক্তদের মধ্যে যাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা হলো জর্জ বোড়ো ওরফে বি জোয়াংখান,অজয় বসুমতারি ওরফে ওয়াগাই,রাহুল ব্ৰহ্ম ওরফে খর্গেশ্বর ব্ৰহ্ম,রাজেন গয়ারি ওরফে রিফি খাং,মথুরাম ব্ৰহ্ম,রাজু সরকার,প্ৰভাত বোড়ো ওরফে থাপা,আনচাই বোড়ো ওরফে অজিত বোড়ো,নীলিম দৈমারি,ইন্দ্ৰ ব্ৰহ্ম,লকরা বসুমতারি,জয়ন্তী ব্ৰহ্ম ওরফে যুগমি এবং বিথরাই ওরফে বৈশাগি। এদের ভারতীয় দণ্ডবিধির আনলোফুল অ্যাক্টিভিটিস প্ৰিভেনশন অ্যাক্ট এবং এক্সপ্লোসিভ সাবস্টেন্স অ্যাক্টের ৩/৪-এর অধীনে ১২০(বি)। ৩০২/৩২৪/৩২৬/৪৩৫/৪৩৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তবে বিশেষ আদালত মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মৃদুল গয়ারিকে নির্দোষ ঘোষণা করেছে।

মামলার মূল অভিযুক্ত এনডিএফবি-র প্ৰধান রঞ্জন দৈমারি ২০১৩-র জুন মাস থেকে অন্তর্বর্তী জামিনে ছিলেন। কিন্তু এদিন আদালত রঞ্জনকে দোষী ঘোষণা করায় তার অন্তর্বর্তী জামিন বাতিল হয়ে যায়। তাই আদালত চত্বরেই এদিন রঞ্জনকে গ্ৰেপ্তার করে গুয়াহাটির কেন্দ্ৰীয় কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিস্ফোরণের ঘটনা সম্পর্কে গুয়াহাটির পানবাজার ও দিশপুর থানায় এজাহার দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া কোকরাঝাড়,বরপেটা রোড ও বঙাইগাঁও থানায়ও দায়ের হয়েছিল এজাহার। প্ৰাথমিক অবস্থায় অসম পুলিশই মামলার তদন্ত শুরু করে। পরে তদন্তের ভার দেওয়া হয় সিবিআইকে। মামলার তদন্তে নেমে সিবিআই ২০০৯ সালে প্ৰথম চার্জশিট দাখিল করে আদালতে। এরপর ২০১১ সালে আরও দুটি চার্জশিট দাখিল করা হয়। ওই সময় মোট ২২ জন অভি্যুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছিল। মামলায় অভিযুক্ত ২২ জনের মধ্যে ৭জন পলাতক। তবে এই ৭জনের মধ্যে দু-একজনের ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে। মামলায় ৬৫০ জনের সাক্ষ্য গ্ৰহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে চার্জশিটে। সিবিআই সূত্ৰে জানা গেছে আদালতে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের মধ্যে ছিলেন ফারেনসিক বিশেষজ্ঞ,পুলিশ,সিজেএম আদালতে ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা আইনজীবী,গণেশগুড়ির উড়ালসেতুর নিচে থাকা দোকানদার,ঘটনায় আহত,মৃতের পরিবার,ময়না তদন্ত করা চিকিৎসক সহ অন্যান্যরা। তাছাড়া সরকারের তরফ থেকে আদালতে জমা দেওয়া ৬৮৭ পৃষ্ঠার তথ্য ও অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তি খতিয়ে দেখার পর আদালত ওই রায় দেয়। সেই অভিশপ্ত দিনটির কথা আজও ভুক্তভোগী পরিবারগুলো মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। এদিন সিবিআই আদালত চত্বরে ভুক্তভোগী পরিবারের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। অনেকেই দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করেছেন।

বিস্ফোরণের ঘটনার পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ থেকে রঞ্জনকে গ্ৰেপ্তার করা হয় এবং ওই বছর মে মাসে তাকে ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। ডিআর নাম্বলা নামে পরিচিত রঞ্জন ১৯৮৬ সালের ৩ অক্টোবর বোড়ো সিকিউরিটি ফোর্স গঠন করেছিলেন এবং পরে সংগঠনের নাম পাল্টে করেন এনডিএফবি। ২০০৫ সালে এই জঙ্গি সংগঠন ভারত সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে। তদন্তকারী সংস্থাগুলি ধারা বিস্ফোরণের ঘটনায় রঞ্জনকে মূল মাথা ঘোষণা করার পর সংগঠনে চিড় ধরে। এমনকি সংগঠন থেকে রঞ্জনকে সাসপেন্ড করা হয়। এরপরই এনডিএফবি(আর)্নামে আরও একটি সংগঠনের জন্ম দেন রঞ্জন। পরে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় ব্যস্ত থাকার কথা বিবেচনা করে ২০১৩ সালে শর্তসাপেক্ষে দৈমারির জামিন মঞ্জুর করা হয়েছিল সিবিআই নো অবজেকশন দাখিল করার পর।

সোমবার আদালতের রায় ঘোষণার পর রঞ্জনকে ফের গ্ৰেপ্তার করে গুয়াহাটি কেন্দ্ৰীয় কারাগারে পাঠানো হয়। বোড়ো মহিলা সংগঠনের সভানেত্ৰী তথা রঞ্জনের বোন অঞ্জলি দৈমারি প্ৰতিক্ৰিয়া ব্যক্ত করে বলেন,এধরনের বিচারের রায় ও শান্তি প্ৰক্ৰিয়া একসঙ্গে চলতে পারে না।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com