নিয়তির এবং সমাজের- দুইয়েরই এ এক অদ্ভুত পরিহাস। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর যখন খবর মিলেছিল, বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা-চিত্রনাট্যকার কাদের খানের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে, তার পরেই দ্রুত রটে গিয়েছিল মৃত্যুর খবর। বিব্রত পুত্র সরফরাজ খান এই মর্মে বিবৃতিও দিতে বাধ্য হয়েছিলেন যে কাদের এখনও জীবিত আছেন, ভেন্টিলেটরে থাকলেও এখনও তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেননি। সে ৩১ ডিসেম্বরেরই কথা।
অথচ নিয়তির পরিহাসে যে দিন সকালে এই বিবৃতি দিলেন সরফরাজ, সে দিন সন্ধ্যাবেলাতেই ৮১ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন কাদের খান। “বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে কানাডার ঘড়িতে যখন ৬টা বাজে, তখন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন তিনি। এ দিন বিকেল থেকেই উনি কোমায় চলে গিয়েছিলেন। প্রায় ১৬-১৭ সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি”, জানিয়েছেন সরফরাজ কানাডারই এক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন খান। ভুগছিলেন প্রোগ্রেসিভ সুপ্রানিউক্লিয়ার পালসি অসুখে। এই অসুখ যেমন শারীরিক ভাবে তাঁর ভারসাম্য নষ্ট করে হাঁটার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল, তেমনই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল স্মৃতিও। তবে ২৯ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হয়ে যাওয়ায় সাধারণ ভেন্টিলেটরের পরিবর্তে তাঁকে রাখা হয়েছিল বাইপাপ ভেন্টিলেটরে। কিন্তু কাদেরের কথা বলার শক্তি তখন ছিল না, তিনি কেবল চোখ মেলে তাকাতে পারছিলেন- এই পর্যন্তই!
১৯৩৫ সালের ২২ অক্টোবর আফগানিস্তানের কাবুলে জন্ম নেওয়া কাদেরের পেশাগত জীবন কিন্তু শুরু হয়েছিল অধ্যাপনা দিয়ে। চলচ্চিত্র শিল্পে যোগ দেওয়ার পূর্বে (১৯৭০-৭৫) তিনি মুম্বইয়ের এম. এইচ. সাবু সিদ্দিক কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পুরকৌশলের একজন অধ্যাপক ছিলেন। কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠানে তিনি একটি নাটকে অভিনয় করেন, যা উপস্থিত সকলের প্রশংসা অর্জন করে। দিলীপ কুমার এই অভিনয় সম্পর্কে জানতে পারেন, কাদের খান তাঁকে তাঁর অভিনয় দেখার জন্য বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানান। কুমার তাঁর অভিনয়ে সন্তুষ্ট হন এবং তাঁর সঙ্গে পরবর্তী দুটি সিনেমায় কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। একটি হল সাগিনা মাহাতো এবং অন্যটি বৈরাগ।
কাদের খান ১৯৭০ সাল থেকে একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত ৪৫০টিরও বেশি হিন্দি এবং উর্দূ সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং ২৫০টিরও বেশি ভারতীয় সিনেমার সংলাপ লিখেছেন। মিঃ নটবরলাল, খুন পসিনা, দো অর দো পাঁচ, সত্তে পে সত্তা, ইনকিলাব, গ্রিফতার, হাম, খুন ভরি মাঙ্গ এবং অগ্নিপথ যার মধ্যে খুবই আদৃত। পেয়েছেন ১৯৮২ এবং ১৯৯৩ সালে সেরা সংলাপের ফিল্মফেয়ার পুরস্কার, যথাক্রমে মেরি আওয়াজ সুনো এবং অঙ্গার ছবির জন্য। এ ছাড়া সেরা কমেডিয়ানের ফিল্মফেয়ার সম্মান পেয়েছিলেন ১৯৯১ সালে বাপ নম্বরি বেটা দশ নম্বরি ছবির জন্য।
সন্দেহ নেই, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর শুধু একটি বছরই নয়, বলিউডের একটি যুগও বিদায় নিল। তবে দেশের প্রিয় এই অভিনেতার দেহ ছেলেরা দেশের মাটিতে সমাধিস্থ করবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। “আমরা শেষকৃত্য কানাডাতেই সম্পন্ন করব। আমাদের পরিবারের সকলেই এখানে রয়েছেন, তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে”, জানিয়েছেন সরফরাজ।