গুয়াহাটিঃ রাজ্যে প্ৰাথমিক স্কুলগুলির শিক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। রাজ্যের ব্যাপক সংখ্যক সরকারি প্ৰাথমিক বিদ্যালয় প্ৰায় বন্ধ হওয়ার মুখে। রাজ্যের শিক্ষা বিভাগ এই স্কুলগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে অন্ধকারে হাতড়াচ্ছে। স্কুলগুলিকে তারা আদৌ বাঁচিয়ে রাখতে পারবে কিনা তা এখন প্ৰশ্ন চিহ্নের মুখে।
পরিস্থিতি গভীরভাবে অধ্যয়ন করে এটা দেখা গিয়েছে যে পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাত্ৰছাত্ৰী না থাকায় সরকারি প্ৰাথমিক বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোনও কোনও ক্ষেত্ৰে আবার এমনও দেখা গেছে কিছু কিছু বিদ্যালয়ে ছাত্ৰ-শিক্ষকের অনুপাতও ঠিক নয়। অভিভাবকরা কেন তাদের ছেলে-মেয়েকে সরকারি প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠাতে চান না শিক্ষা বিভাগকে অচিরেই তার কারণ খতিয়ে দেখা উচিত। অন্যথায় রাজ্যে আরও বহু প্ৰাথমিক বিদ্যালয় অচিরেই বন্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তেজপুর শহরের বুকে বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের কথা বলা যেতে পারে। এই বিদ্যালয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে দশম শ্ৰেণি পর্যন্ত ছাত্ৰ রয়েছে মাত্ৰ ৪০ জন। অথচ শিক্ষক রয়েছেন ১৩ জন। এহেন পরিস্থিতির ফলে আজ অথবা কাল স্কুলটি যে বন্ধের মুখে পড়বে তা বলাই বাহুল্য।
নগাঁও জেলায় এই পরিস্থিতি আরও শোচনীয় রূপ ধারণ করেছে। সূত্ৰটির মতে,জেলার কঠিয়াতলি মুদইনি এলপি স্কুল,ধিঙের গোসাইপট্টি এলপি স্কুল,কলিয়াবরের বান্দরডুবি এলপি স্কুল এবং জেলার ননৈ এলপি স্কুল প্ৰায় বন্ধ হয়ে গেছে বলা যায়। এই স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্ৰধান কারণ হলো পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাত্ৰাভাব। জেলায় আরও বেশ কয়েকটি এলপি স্কুলও বন্ধ হওয়ার পথে। রাজ্যের অন্যান্য জেলার পরিস্থিতিও প্ৰায় তথৈবচ। সরকারি এলপি স্কুলগুলির এহেন দুর্দশার আরও একটি প্ৰধান কারণ হলো ব্যাঙের ছাত্ৰার মতো যেখানে সেখানে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল গজিয়ে ওঠা। অধিকাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানদের ইংরেজি স্কুলে পাঠাতেই বেশি পছন্দ করছেন। কারণ ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোতে নিয়ম,নীতি,সময়ানুবর্তিতা এবং সর্বোপরি শিক্ষাদান ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে অনেক উন্নত বলে মনে করছেন অভিভাবকরা। আর সেজন্যই নিজেদের সন্তানকে তারা অসমিয়া মাধ্যমের সরকারি স্কুলে না পাঠিয়ে ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়ে পাঠাতেই বেশি তৎপর।
তাছাড়া সরকারি স্কুলগুলিতে শিক্ষকদের ক্লাস নেওয়ায় গড়িমসি এবং বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার একটা প্ৰবণতা হামেশাই নজরে আসে।
সরকার এলপি স্কুলগুলিতে ছাত্ৰ ছাত্ৰীদের জন্য মধ্যাহ্ন আহারের ব্যবস্থা করেছে ঠিকই। কিন্তু ছাত্ৰদের জ্ঞান বৃদ্ধির প্ৰতি নজর দেওয়ার পরিবর্তে মধ্যাহ্ন আহারেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে ছড়িয়ে গেছে। একটা সময় গেছে যখন রাজ্যে কোনও কিছু বিবেচনা না করেই খুব কাছেপিঠে দুটি এলপি স্কুল স্থাপন করা হয়েছিল। তাই সরকারি প্ৰাথমিক স্কুলগুলিকে বাঁচাতে হলে বেসরকারি স্কুলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মান বাড়ানোর প্ৰতি নজর দিতে হবে সরকারকে। সরকার যদি সময় থাকতে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহণ না করে তাহলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি হাতের বাইরে যে চলে যাবে সেটা অবধারিত।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ স্কুলে পাস-ফেইল প্ৰথা পুনরায় চালু করতে আগ্ৰহী উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলি