ন্যাশনাল

জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল রাজ্যসভায় উতরে গেল,দ্বিখণ্ডিত হলো উপত্যকা

Sentinel Digital Desk

নয়াদিল্লিঃ সামান্য বাক বিতন্ডা হলেও সোমবার রাজ্যসভায় জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল ২০১৯ অনায়াসেই পাস হয়ে যায়। সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা বাতিল ঘোষিত হওয়ায় জম্মু ও কাশ্মীর বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হারাল। সেই সঙ্গে রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করার পথও খুলে গেল। রাজ্যে এখন দুটো কেন্দ্ৰশাসিত অঞ্চল হচ্ছে। একটি জম্মু ও কাশ্মীর এবং অন্যটি লদাখ। সারা দেশের মানুষ এখন জম্মু ও কাশ্মীরে জমি কেনার সু্যোগ পাবেন-বিলে রাখা হয়েছে এই ব্যবস্থাও। এদিন জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্গঠন বিলটির পক্ষে পড়ে ১২৫ ভোট,বিপক্ষে পড়ে ৬১টি। বিল পাসকে কেন্দ্ৰ করে কাশ্মীর উপত্যকায় জনজীবন স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। এদিকে জম্মু ও কাশ্মীরের প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী তথা পিডিপি সভানেত্ৰী মেহবুবা মুফতিকে রবিবার রাতে গৃহবন্দি করে রাখা হয় এবং সোমবার কাশ্মীর দ্বিখণ্ডিত বিলটি রাজ্যসভায় উতরে যাওয়ার পর সন্ধ্যার দিকে মেহবুবাকে গ্ৰেপ্তার করা হয়। শ্ৰীনগরের এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্ৰেটের নির্দেশেই মুফতিকে গ্ৰেপ্তার করে হরিনিবাস গেস্ট হাউসে স্থানান্তর করা হয়েছে। কাশ্মীরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কায়ই প্ৰথম শ্ৰেণির এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্ৰেট এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আব্দুল্লা ও ফারুক আব্দুল্লাকে রবিবার রাতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের আগেই গ্ৰেপ্তার করা হয়েছিল কশ্মীর পরিস্থিতির গুরুত্ব আগাম আঁচ করে।

স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী অমিত শাহ সোমবার লোকসভায় বিলটি উত্থাপন করেন। সদনে কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল নিয়ে আলোচনার পর ধ্বনি ভোটে তা পাস হয়ে যায়। এরপরই বিলটি আলোচনার জন্য রাজ্যসভায় তোলা হয়। শাহ বিরোধীদের আশ্বস্ত করে বলেন,মঙ্গলবার বিলটি রাজ্যসভায় তোলার পর এব্যাপারে বিস্তারিত জবাব তিনি দেবেন এবং বিতর্কেও অংশ নেবেন।

এদিকে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল এবং রাজ্যকে দ্বিখণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ভারত রাষ্ট্ৰপুঞ্জের ৫ স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্ৰ এবং বিদেশি দূতদেরও আগেই অবগত করিয়েছে। কাশ্মীরে সুশাসন প্ৰবর্তন এবং অর্থনৈতিক উন্নতির স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ভারত রাষ্ট্ৰপুঞ্জের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্ৰকে জানিয়েছে। তাছাড়া এটা ভারতের সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে জানানো হয়েছে। বিতর্কিত ৩৭০ ধারা অপসারণে কেন্দ্ৰের পরিকল্পনার আভাস পাওয়া গিয়েছিল কিছুদিন আগেই। ৩৭০ ধারা তুলে নিলে কাশ্মীর অশান্ত হতে পারে আঁচ করে ১০ হাজার অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল ওই রাজ্যে। ধরপাকড়ও চলছিল। সীমান্তের ওপারের সঙ্গে এপারের সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের পোরা হয় জেলে। বর্ষীয়ান কংগ্ৰেস নেতা গুলাম নবি আজাদ রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৩৭০ ধারা রদের তীব্ৰ বিরোধিতা করে বলেন,বিজেপি সংবিধানকে খুন করেছে। বিল পাসের খবর কানে আসতেই প্ৰচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন কাশ্মীরের প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী মেহবুবা মুফতি। তিনি বলেন,আজকের দিন ভারতীয় গণতন্ত্ৰের সবচেয়ে কালো দিন। কাশ্মীরের মানুষ এই সিদ্ধান্ত কখনোই মানবেন না-বলেন মেহবুবা। কাশ্মীরি নেতা ওমর আব্দুল্লাও একইভাবে বিলের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন,এটা বিশ্বাসঘাতকতারই শামিল।

বিতর্কিত ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ায় রাজ্যের মর্যাদাও হারাল কাশ্মীর। এখন জম্মু কাশ্মীর হল একটি কেন্দ্ৰ শাসিত অঞ্চল এবং লদাখ আরও একটি পৃথক কেন্দ্ৰ শাসিত অঞ্চল। কাশ্মীরে বিধানসভা থাকছে,লদাখে তা থাকছে না। তবে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব এখন বর্তাবে কেন্দ্ৰের ওপরই। আর্থিক ক্ষমতা ছাড়া অন্য সমস্ত ক্ষমতা থাকবে কেন্দ্ৰের হাতে। স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী শাহ সরকারের এই পদক্ষেপকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন। শাহ বলেন,বিতর্কিত এই ধারার অবসানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপের প্ৰয়োজন ছিল। প্ৰয়োজন ছিল ভোট ব্যাংক রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি সেটাই করে দেখিয়েছেন-বলেন অমিত।

তবে স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী একথাও বলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরকে কেন্দ্ৰশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরের বিষয়টি স্থায়ী কোনও বিষয় নয়। স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসলে ফের কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা পেয়ে যাবে। তিনি বলেন কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতের সঙ্গে কাশ্মীরের মিলেমিশে চলার ক্ষেত্ৰে ৩৭০ ধারাই প্ৰতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি গত ৭০ বছর ধরে রাজ্যের যুবকদের লুণ্ঠন করেছে। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি যেকোনও মূল্যে এড়িয়ে চলতে হবে। ৩৭০ সব ধর্মের ক্ষেত্ৰেই সমভাবে ক্ষতিকারক ছিল-বলেন শাহ।