কলকাতার সেক্সপিয়ার শরণিতে এখন প্ৰচণ্ড ভিড়। ৩৬ নম্বর চৌরঙ্গি লেন কলকাতার পেচনদিকে অবস্থিত প্ৰসিদ্ধ একটি এলাকা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সঞ্চালকালয় রয়েছে ওই এলাকায়। আক্ষরিক অর্থে মল্লিক বাজারের সেক্সপিয়ার শরণিতে থাকা এই রাজ্যিক আর্কায়িক সঞ্চালকালয়কে নিয়ে কলকাতাবাসী কোনওদিনেই মাথা ঘামায়নি। কিন্তু অসমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করা বাসিন্দাদের জন্য কলকাতার ৪৩,সেক্সপিয়ার শরণি অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যিক আর্কায়িক ডিরেক্টরেট এখন খুবই ব্যস্ত। রাত-দিন এক করে কাজ করা হচ্ছে ওখানে। অন্তত জাতীয় নাগরিক পঞ্জির(এনআরসি)চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পরা প্ৰায় ৪০ লক্ষ অসমের বাসিন্দায় ভরে পড়েছে ওই অঞ্চল।
নাগরিকত্বের তথ্য ও সবোধ সংগ্ৰহের জন্য শেষ চেষ্টা করছেন তারা। কেন না সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পূর্বের ‘এলেক্ট্ৰরেল রোল’ অথবা ভোটার তালিকা। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বংশগত ভাবে সংযোগ থাকা অসমে সম্প্ৰতি বসবাস করা ব্যক্তির জন্য এনআরসির তালিকায় যেভাবেই হওক নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য এই প্ৰচেষ্টা। অসমের সীমান্তবর্তী কোচবিহার,আলিপুরদুয়ার,জলপাইগুড়ি,রায়গঞ্জ ইত্যাদি জেলা থেকে একসময় প্ৰব্ৰজন ঘটেছিল কয়েকলক্ষ বাঙালি। একইসঙ্গে অসমে বসবাস করা একাংশ পরিবারের পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক এখনও অটুট রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর পশ্চিমবঙ্গ থেকে অসমে আসা কয়েকলক্ষ বাঙালি সম্প্ৰদায়ের লোক অসমের বাসিন্দা এবং বৈবাহিক সূত্ৰে এখানে বসবাস করছেন।
বিশেষকরে বাঙালি মহিলার হাতে এনআরসির জন্য প্ৰয়োজনীয় ১৫টি নথির মধ্যে অধিকাংশই অভাব রয়েছে। কেন না ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পূর্বে পাসপোর্ট,ড্ৰাইভিং লাইসেন্স,এলআইসি পলিচি,ডাকঘরের পাসবুক ইত্যাদি ছিল না। একসময়ে থাকলেও এখন সেই নথিগুলো আরও নেই। এমনকি বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের হাতে কিছু তথ্য থাকলে বের করাটা খুবই কঠিন। এনআরসিতে নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য প্ৰয়োজনীয় ১৫টি নথির ভিতরে সহজলভ্য সরকারি নথি হচ্ছে ভোটার তালিকা। তাই প্ৰতিবেশি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে এরাজ্যে আগমন ঘটা বাসিন্দা এবং বৈবাহিক সূত্ৰে অসমের বাসিন্দা হওয়া মহিলারা এখন তাদের বাবা-মা,দাদু-দিদা-র নাম অন্তর্ভূক্ত থাকা পুরণো নথির খোজ করছেন। জানা গেছে,অধিকাংশ নথির অবস্থা খুবই খারাপ। লেখা বুজা যাচ্ছে না। ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পূর্বের তালিকাও পাওয়া যাচ্ছে না। আর্কাইভ ডিরেক্টরেতে ভোটার তালিকা থাকলেও আবেদনকারীরা সেটা ফতোস্টেট অথবা ছবি তোলে আনতে পারছেন না।
এধরনের তথ্য এনআরসি কর্তৃপক্ষ গ্ঽণ করবে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ছবি তোলার অনুমতি দিচ্ছে না। নির্দিষ্ট প্ৰ-পত্ৰ আবেদনকারী তার প্ৰয়োজনীয় সাল,কেন্দ্ৰ ইত্যাদি পূরণ করে সামান্য মাসুলের বিনিময়ে ডিরেক্টরেটে দুটি করে আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু এই প্ৰক্ৰিয়া খুবই কঠিন। কেননা লক্ষ লক্ষ নথি থেকে এধন্দের তথ্য খুজে বের করাটা খুবই কঠিন কাজ। অবশ্যে খুজ পাওয়ার সঙ্গে সংগে আবেদনকারীকে সেই তালিকা থেকে সার্টিফাইড কপি দেওয়া হয় না। এরজন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে এক থেকে ডের মাস। উৎকোচ দেওয়আরও অভিযোগ উঠছে। এক একজন ব্যক্তির কাজ থেকে তালিকা দেওয়ার নামে ১০ থে ১২ হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। দালাল চক্ৰ সক্ৰিয় হয়ে পড়েছে। এধরনের সামগ্ৰিক বিষয়ে প্ৰকৃত ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও বহু মানুষ এনআরসি থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য,কথায় কথায় বাঙালির আবেগ নিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য রাখা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বন্দোপাধ্যায় এক্ষেত্ৰে কি ভূমিকা পালন করে সেটাই হবে লক্ষণীয়।