নয়াদিল্লিঃ ‘অসমের সদ্য প্ৰকাশিত রাষ্ট্ৰীয় নাগরিক পঞ্জি(এনআরসি)হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য একটা মূল দলিল এবং এটা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’। সুপ্ৰিম কোর্টের মুখ্য বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রবিবার একথা বলেন। অসমের এনআরসি এই মুহূর্তে নিছকই একটা দলিল নয় বলে উল্লেখ করে গগৈ বলেন,ভবিষ্যতের দাবি দাওয়া নির্ধারণের ক্ষেত্ৰেও এটা সহায়ক হবে। নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে বিশিষ্ট সাংবাদিক মৃণাল তালুকদারে ‘পোস্ট কলোনিয়াল আসাম’ গ্ৰন্থটি উন্মোচন করে ভাষণ দিচ্ছিলেন মুখ্য বিচারপতি গগৈ।
অবৈধ প্ৰব্ৰজন সম্পর্কে তিনি বলেন,পর্যায় ক্ৰমে ঘটা অনুপ্ৰবেশে অসমে রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং অসমিয়াদের শান্তি যে বিঘ্নিত হয়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তিনি বলেন,রাজ্যের একাংশ মানুষ এবং কিছু দল,সংগঠন একটা সেকেলে ধারণা নিয়ে এনআরসি চেয়েছিলেন। রাজ্যে কি পরিমাণ অনুপ্ৰবেশ ঘটেছে সাম্প্ৰতিক এনআরসিতে তারই একটা রূপরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। ‘১৯ লক্ষ হোক বা ৪০ লক্ষ,নাগরিক পঞ্জি থেকে কতজন লোকের নাম বাদ পড়েছে সেটা বিচার্য বিষয় নয়’। তবে এনআরসি হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য একটা মূল দলিল। এটা অসমের ভবিষ্যতের দলিল ভাণ্ডার। এই নথির ভিত্তিতে ভবিষ্যতের দাবি-দাওয়া ইত্যাদি আমরা নির্ধারণ করতে পারবো। আমার দৃষ্টিতে এনআরসি ভবিষ্যতের একটা মূল দলিল এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ক্ষেত্ৰে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’।
তিনি বলেন,এনআরসি-র জন্য রাজ্যের একাংশ মানুষ ও দল সংগঠন বিভিন্ন ভিত্তি বছর অনুমোদন করেছিলেন। নাগরিক পঞ্জি থেকে কতজন লোকের নাম বাদ পড়লো তা নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত রয়েছেন একাংশ ব্যক্তি ও দল,সংগঠন। তিনি বলেন,কেউ কেউ এনআরসি নিয়ে একটা বিকৃত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। জাতীয় পর্যায়েও এনিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। তাঁর মতে,বিচার্য বিষয় হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে অসমের বিদেশি সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্ৰে এনআরসি কতটা সহায়ক হবে। আর এনআরসিকে বিচার করতে হবে এই দৃষ্টিকোণ থেকে। তিনি বলেন,‘এনআরসির ধারণা নতুন বা ঔপন্যাসিক মোটেই নয়। এটা ১৯৫১ সালের এনআরসিকেই নবায়ণ করা হয়েছে-এর চেয়ে বেশি বা কম কিছু নয়’। তিনি বলেন,কিছু শক্তি এনআরসি নিয়ে রাজ্যে অশান্তি ও বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা করছে।
মুখ্য বিচারপতি এদিন মূল স্ৰোতের সংবাদ মাধ্যমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ারও সমালোচনা করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় এনআরসি নিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলায় তিনি উৎকন্ঠা ব্যক্ত করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত আক্ৰমণ,অনুষ্ঠান,প্ৰতিষ্ঠানকে খাট করার যে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে মানব সভ্যতার বিকাশে একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে আশঙ্কা প্ৰকাশ করেছেন গগৈ। একটা ন্যস্ত স্বার্থান্বেষী মহল এজাতীয় কাজের সঙ্গে মুক্ত বলে অভি্যোগ করেন তিনি।
সমাজে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন,ওই শক্তিগুলো রাজ্যের শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে বিগড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গগৈ বলেন,প্ৰকাশিত নাগরিক পঞ্জি গ্ৰহণ করা হলে অসমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ মসৃণ হবে। তাঁর মতে,নথিটি মেনে নিলে তার ভুল ভ্ৰান্তি আমরা বুঝতে পারবো। এনআরসিকে ত্ৰুটিপূর্ণ বলে উল্লেখ করলে মানুষের কোনও কাজই আখেরে সফল হবে না। তিনি পুরো বিষয়টিকে গঠনমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করার আহ্বান জানান। তরুণ সমাজের উদ্দেশে তিনি বলেন,সুস্থ রাজনীতি অবিহনে একটা সমাজে নেতিবাচক প্ৰভাব পড়ে। সুস্থ রাজনীতিই দেশ ও জাতির অধিকার নিশ্চিত করতে পারে-বলেন গগৈ। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন,যারা এনআরসির ভিত্তি বছর পাল্টানোর আওয়াজ তুলছে তারা আসলে আগুনের সঙ্গে খেলছেন।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ একাংশ এফটি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কে বেঞ্চে মডালিটিস পেশ করবে সরকার
অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Watch | Orang Raas Mohotsav Preparation