গুয়াহাটিঃ রাজ্যে সরকারি প্ৰাথমিক বিদ্যালয়গুলোর ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদের মধ্যাহ্ন ভোজন আহার নিয়ে এক টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মধ্যাহ্ন ভোজন স্কিমের অধীন রাঁধুনী এবং সহায়করা এই ইস্যু নিয়ে রীতিমতো ‘বিদ্ৰোহ’ প্ৰদর্শন করছেন। চাকরির নিরাপত্তা এবং বিদ্যালয়ের কচিকাঁচাদের খাদ্যের অনুপযোগী আহার বিতরণের প্ৰতিবাদে বিভিন্ন প্ৰাথমিক বিদ্যালয়ের রাঁধুনী এবং সহায়করা গত ১ নভেম্বর থেকে পথে নেমে প্ৰতিবাদ জানাচ্ছেন। বিভিন্ন স্থানে রাঁধুনীদের প্ৰতিবাদে বিদ্যালয়সমূহে পাঠদান ব্যবস্থা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয় সমূহের একাংশ ছাত্ৰও এই আন্দোলনে শামিল হয়েছে। এই স্কিমে যে সমস্ত এনজিওকে জড়ানো হয়েছে তারা সীমিত পরিমাণ ও নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ করার অভিযোগই রাঁধুনী ও সহায়কদের এধরনের বিদ্ৰোহের স্পষ্ট কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই আন্দোলনের সার্বিক চিত্ৰটা হচ্ছে,এনজিওকে মধ্যাহ্ন ভোজন স্কিমের দায়িত্ব দেওয়ায় এবং তারা নিম্নমানের খাদ্য সরবরাহ করার অভি্যোগ সম্পর্কে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে প্ৰধান শিক্ষকরা অসন্তুষ্টি প্ৰকাশ করেছেন। অন্যদিকে,এই স্কিমে যে সমস্ত রাঁধুনী এবং সহায়কদের জড়ানো হয়েছিল তাঁরা এখন চাকরি খোয়ানোর আশঙ্কায় ভুগছেন। কয়েকটি ক্ষেত্ৰে বিদ্যালয়গুলোতে সীমিত পরিমাণ খাদ্যই নয়,নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ করারও অভিযোগ উঠেছে। মোদ্দা কথা হচ্ছে,এই স্কিমে যে সমস্ত এনজিওদের জড়ানো হয়েছে তারা স্কুল পড়ুয়াদের সীমিত পরিমাণ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশন করছে বলে ওই অভি্যোগে প্ৰকাশ। এনজিও-র সরবরাহ করা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য রাঁধুনীরা রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলার দৃশ্যও দেখা গিয়েছে কোথাও কোথাও।
এব্যাপারে রাজ্য শিক্ষা বিভাগের একজন পদস্থ আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,‘মধ্যাহ্ন ভোজন স্কিমে এনজিওগুলোকে জড়ানোর মূল উদ্দেশ্য ছিল প্ৰধান শিক্ষকদের বোঝা হাল্কা করা। কারণ মধ্যাহ্ন ভোজনের আহারের জন্য প্ৰধান শিক্ষকদেরই হাটবাজার এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ করতে হতো। তাই প্ৰধানশিক্ষকরা যাতে পাঠাদান ও বিদ্যালয় প্ৰশাসনের কাজে অধিক সময় দিতে পারেন তার জন্য তাঁদের ওপর থেকে বাড়তি বোঝা কমাতে চাওয়া হয়েছিল। এছাড়া,দুপুরের আহার নিয়ে বেশকিছু প্ৰধান শিক্ষক বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। তবে এদের বেশকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে’। ‘আমরা পাইলট প্ৰোজেক্ট হিসেবে রাজ্যের ২৫ শতাংশ স্কুলের জন্য মাত্ৰ ১৫টি এনজিওকে কাজে লাগিয়েছি’।
এব্যাপারে এসএসএ(সর্বশিক্ষা অভি্যান)-এর মিশন ডিরেক্টর শ্যামশের সিং-এর সঙ্গে যোগা্যোগ করা হলে তিনি বলেন,‘একটা বিষয় খুবই পরিষ্কার যে,দুপুরের আহার স্কিমের নোডাল অফিসার হচ্ছেন জেলাশাসকরা। এই স্কিমের অধীনে যে সমস্ত খাদ্য সরবরাহ হচ্ছে তার গুণগত মান,পরিমাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি তাদের তদারক করা প্ৰয়োজন। যদি খাদ্য নিম্নমানের হয়ে থাকে তাহলে জেলাশাসকদের এক্ষেত্ৰে হস্তক্ষেপ করে পরিস্থিতি পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই সব জেলাশাসকদের প্ৰতি কেন্দ্ৰীয় রন্ধনশালার জন্য একটি টিম গঠন করতে বলা হয়েছে। যাতে ওই টিম মধ্যাহ্ন ভোজন আহারের গুণগত মান,পরিমাণ ও নিরাপত্তার বিষয়টি তদারক করতে পারেন’।
সিং আরও বলেন,রাঁধুনী ও সহায়করা সরকারি কর্মী নন। তবে মিড ডে মিল স্কিমে কাজ করার জন্য তারা একটা সাম্মানিক পাচ্ছিলেন। এনজিও কাজে নেমে পড়ায় রাঁধুনী ও সহায়করা চাকরি হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন। তবে বর্তমানে যেভাবে কাজ চলছে তাতে রাঁধুনীদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করা হবে না। নতুন ব্যবস্থায় তারা এখন তৈরি খাবার ছাত্ৰ-ছাত্ৰীদের বিতরণ করবেন এবং পারিশ্ৰমিকও পেয়ে যাবেন। অক্ষয় পাত্ৰ নামে একটি এনজিও গত বছর থেকে উত্তর গুয়াহাটির ১০০টি স্কুলে দুপুরের আহার সরবরাহ করছে স্বাভাবিকভাবে। ওখানে মধ্যাহ্ন ভোজনের আহার নিয়ে কোনও ঝামেলা পাকায়নি’।
রাঁধুনীদের একটা গোষ্ঠী অভি্যোগ করেছে্ন,এনজিও যে সমস্ত খাবার সরবরাহ করছে সেগুলো একটা কেন্দ্ৰীয় রান্নাঘরে মাঝ রাত থেকে রান্না করা হচ্ছে এবং সেই খাবার পরদিন দুপুরে পড়ুয়াদের বিতরণ করা হচ্ছে। ফলে সেই খাবার রীতিমতো বাসি। আগে রাঁধুনীরা স্কুল চলাকালে রান্না করতেন এবং সেই গরম খাবার ছাত্ৰদের পরিবেশন করা হতো-বলেছেন রাঁধুনীরা।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ গুয়াহাটিতে উ.পুবের দীর্ঘতম উড়াল সেতু হচ্ছে
অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Food Processing Machine got damaged in South Salmara, Students deprived of mid day meal