সংবাদ শিরোনাম

তিন তালাক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে,রাজ্যসভায়ও উতরে গেল বিল

Sentinel Digital Desk

নয়াদিল্লিঃ বহু কাঠখড় পোড়ানোর পর অবশেষে রাজ্যসভায়ও পাস হয়ে গেলো তিন তালাক বিল। সেই সঙ্গে সৃষ্টি হলো এক নতুন ইতিহাসের। যখন তখন তিন তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর এই মধ্যযুগীয় প্ৰথা এখন থেকে নিষিদ্ধ হচ্ছে। মুসলিম সমাজে তালাক দেওয়ার প্ৰথা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং সেই সঙ্গে দোষী সাব্যস্ত সংশ্লিষ্ট স্বামীকে তিন বছর পর্যন্ত হাজত বাস ও জরিমানা দিতে হতে পারে।

এর আগে মুসলিম মহিলা(বিবাহ অধিকার সংরক্ষণ)বিলটি তিনবার লোকসভার ছাড়পত্ৰ পেলেও রাজ্যসভায় বারবারই তা আটকে যাচ্ছিল বিরোধীরা বাগড়া দেওয়ায়। বিলটি রাজ্যসভার ছাড়পত্ৰ পাওয়ার পর সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে,বিলটি আইনি রূপ পেলে সংখ্যালঘু সমাজে প্ৰচলিত এই মধ্যযুগীয় প্ৰথা থেকে মুসলিম মহিলাদের চোখের জল মুছতে সাহা্য্য করবে এবং দীর্ঘ প্ৰতীক্ষিত স্বস্তি এনে দেবে তাদের জীবনে। তালাক প্ৰথা রোধ করা কেন্দ্ৰের বিজেপি সরকারের প্ৰধান লক্ষ্য ছিল। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্ৰের বিজেপি জোট সরকার বিলটি আইনি রূপ দেওয়ার জন্য বার বার চেষ্টা করেও রাজ্যসভায় গরিষ্ঠতার অভাবে তা আটকে যাচ্ছিল। তবে এবার বিরোধী ঐক্যে চিড় ধরিয়ে মোদি সরকার বিলটি রাজ্যসভায় পাস করিয়ে নিতে সফল হয়। মুসলিম মহিলা(বিবাহ অধিকার সংরক্ষণ)বিল ২০১৯ মঙ্গলবার রাজ্যসভায় পেশ করেন আইনমন্ত্ৰী রবিশঙ্কর প্ৰসাদ। এদিন রাজ্যসভায় বিল নিয়ে ভোটাভুটিতে বিলের পক্ষে ৯৯ ভোট পড়ে। বিপক্ষে ভোট পড়ে ৮৪টি। বিল নিয়ে রাজ্যসভায় কয়েক ঘণ্টা আলোচনা চলে। চলে বিতর্কও। বিরোধীরা বিলটি পর্যালোচনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানিয়ে শোরগোল শুরু করে। বিতর্কে অংশগ্ৰহণ করে বিরোধী দলের নেতারা বলেন,কেন্দ্ৰের এই প্ৰয়াস মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হানার শামিল। বিলটি সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো নিয়ে বিরোধীদের প্ৰস্তাবটি ১০০-৮৪ ভোটে পরাস্ত হয়। বিলটি রাজ্যসভার ছাড়পত্ৰ পাওয়ার পর এখন রাষ্ট্ৰপতির অনুমোদন পেলেই তা আইনে পরিণত হবে। বিলটি আইনে পরিণত হলে তিন তালাক দেওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং তালাকদাতার তিন বছর পর্যন্ত জেল ও জরিমানা হবে।

বিলটি নিয়ে ভোটাভুটির সময় এনডিএর শরিক দল জেডি(ইউ)এবং এআইএডিএমকে ও টিআরএস-এর সদস্যরা সভায় ওয়াকআউট করেন। তবে বিজেডি বিলের পক্ষে সরকারের পাশে দাঁড়ায়। ফলে রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও তিন তালাক বিল উচ্চ সদনে পাস করিয়ে নিতে সরকারকে এবার তেমন বেগ পেতে হয়নি।

প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদি তাঁর প্ৰথম দফা কার্যকালের শেষ দিকে বিলটিকে বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হতে পারেননি। তাই দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই বিল পাস করানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা জারি রেখেছিলেন তিনি। অবশেষে সাফল্য এলো। গত ২৫ জুলাই লোকসভায় পাস হয়েছিল এই বিলটি।

কংগ্ৰেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বিলটি সিলেক্ট কমিটি পাঠানোর দাবি করেছিলেন। তাঁর সঙ্গে সুর মেলান প্ৰায় সব বিরোধী সদস্যরা। তারা রীতিমতো হল্লা শুরু করে দেন। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ায় ও প্ৰফুল্ল প্যাটেলে সদনে উপস্থিত ছিলেন না। সমাজবাদী পার্টির কজন নেতাও গরহাজির ছিলেন। ফলে রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও ভোটাভুটিতে একটা ভাল ব্যবধানে বিলটি পাস করিয়ে নেয় সরকার। এখন রাষ্ট্ৰপতি রামনাথ কোবিন্দের অনুমোদনের অপেক্ষা। আইনমন্ত্ৰী প্ৰসাদ এই সাফল্যকে দেশের ক্ষেত্ৰে এক ঐতিহাসিক দিন বলে উল্লেখ করেন। বিলটি আইনে পরিণত হলে মুসলিম মহিলারা ন্যায় বিচার পাবেন। কারণ তিন তালাক প্ৰথা এখন একটা বিচার্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি বিল পাস হওয়ায় সন্তোষ ব্যক্ত করে বলেন,মুসলিম মহিলাদের জন্য এই দিনটি এক নতুন স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের মতো। টুইটারে প্ৰধানমন্ত্ৰী লিখেছেন ‘সারা দেশের কাছে আজকের দিনটি ঐতিহাসিক। আজ দেশের কোটি কোটি মুসলিম মা-বোনেদের সম্মানের সঙ্গে বাঁচার অধিকার মিলেছে। যুগযুগ ধরে তালাকের মতো কুপ্ৰথার শিকার হচ্ছিলেন মুসলিম মহিলারা। তবে এখন তাঁরা ন্যায় পেলেন। এই বিল পাস হওয়ায় মুসলিম মা-বোনেদেরই জয় হলো। মুসলিম মহিলাদের তাদের অধিকার থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রাখা হয়েছে। এখন অধিকার আদায়ে তাঁরা লড়তে পারবেন-এটা সত্যিই গর্বের। এই ঐতিহাসিক ক্ষণে সব সাংসদকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি।

অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ ফের লোকসভায় পাস হলো তিন তালাক বিল