নয়াদিল্লিঃ সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ হওয়ায় গোটা জম্মু কাশ্মীরের চালচিত্ৰে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী অমিত শাহ সোমবার রাজ্যসভায় ৩৭০ ধারা রদ করার প্ৰস্তাব ঘোষণা করায় ইতিমধ্যেই উত্তপ্ত থাকা রাজ্যটির ওপর আরও এক আঘাত লাগলো। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে মিশ্ৰ প্ৰতিক্ৰিয়ার সৃষ্টি হয়।
৩৭০ ধারা রদের পর জম্মু কাশ্মীর বিশেষ রাজ্যের মর্যাদাও হারাচ্ছে। তবে কাশ্মীরে যে একটা বিশাল পরিবর্তন হতে যাচ্ছে তা বিলক্ষণ বোঝা যাচ্ছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদের আগে ও পরে কাশ্মীর পরিস্থিতির প্ৰতি লক্ষ্য করলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি প্ৰকাশ্যে আসবে।
১. জম্মু ও কাশ্মীরের সংবিধান
৩৭০ ধারা বাতিলের আগে জম্মু ও কাশ্মীরই ছিল ভারতের একমাত্ৰ রাজ্য যাদের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। রাজ্যটির নিজস্ব সংবিধান থাকলেও তা দেশের অন্য কোনও রাজ্যে প্ৰযোজ্য ছিল না। ওই সংবিধান রাজ্যটিকে বিশেষ স্বশাসনের এবং পৃথক রাজ্য আইনের ক্ষমতা দিয়েছিল। কিন্তু ৩৭০ ধারা উঠিয়ে নেওয়ার পর জম্মু ও কাশ্মীর এবং রাজ্যের নাগরিকদের জন্য পৃথক সংবিধান আর থাকছে না।
২. ৩৭০ ধারা অপসারণের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকরা দ্বিনাগরিকত্বের সুবিধা ভোগ করছিলেন। প্ৰথমত তারা রাজ্যের নাগরিক হওয়ার পাশাপাশি দেশের নাগরিকত্বের সুবিধাও পাচ্ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ায় রাজ্যের মানুষ একই নাগরিকত্বের সুবিধা পাবেন অর্থাৎ তারা এখন দেশের নাগরিক।
৩. সম্পত্তির মালিকানাঃ
৩৭০ ধারা রদের আগে জম্মু কাশ্মীরের নাগরিকদের শুধু রাজ্যের মধ্যেই কেনা-বেচার অনুমতি দেওয়া হতো। কিন্তু ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর সারা দেশের নাগরিকরা রাজ্যে সম্পত্তি কেনা-বেচার উপযোগী বিবেচিত হচ্ছেন।
৪. দুটো পতাকাঃ ৩৭০ ধারা প্ৰত্যাহারের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের দুটো পতাকা ছিল। একটি রাজ্যের পতাকা এবং অন্যটি ভারতের। ৩৭০ ধারা উঠে যাওয়ার পর রাজ্যের একটি পতাকা হচ্ছে। তা হলো ভারতের তেরঙা।
৫. মৌলিক অধিকারঃ ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে সারা দেশের নাগরিকরা যে মৌলিক অধিকারগুলো ভোগ করতেন তা জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের ক্ষেত্ৰে প্ৰযোজ্য ছিল না। এর কারণ হলো রাজ্য বিশেষ মর্যাদা ভোগ করছিল।
কিন্তু এখন ওই ধারা রদ হওয়ায় জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকরা সারা দেশের নাগরিকদের মতো সম মৌলিক অধিকার ভোগ করবেন।
৬. অ্যাপ্লিকেশন অফ লজঃ ৩৭০ ধারা অপসারণের আগে নাগরিকত্ব,সম্পত্তির মালিকানা ও নাগরিকদের মৌলিক অধিকার সংক্ৰান্ত বিষয়ে পৃথক আইন ছিল। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদের পর এখন থেকে আর কোনও পৃথক আইন থাকছে না কাশ্মীরে। সারা দেশের মতো জম্মু ও কাশ্মীরের নাগরিকদের জন্য একই আইন হচ্ছে।
৭. কেন্দ্ৰীয় আইনঃ ৩৭০ ধারা প্ৰত্যাহারের আগে রাজ্যে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার কোনও ক্ষমতা ছিল না কেন্দ্ৰীয় সরকারের।
কিন্তু ওই ধারা রদের পর রাজ্যে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার পূর্ণ ক্ষমতা পাচ্ছে কেন্দ্ৰীয় সরকার।
৮. ভৌগোলিক অবস্থানঃ সংবিধানের ৩৭০ ধারা অপসারণের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে লদাখও রাজ্যের অংশ ছিল। কিন্তু ৩৭০ ধারা রদের পর জম্মু ও কাশ্মীর এবং লদাখ উভয়েই কেন্দ্ৰ শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা পাচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরে আইনসভা থাকছে। লদাখে থাকছে না আইনসভা।
৯. জাতীয় সংগীতঃ ৩৭০ অপসারণের আগে জম্মু ও কাশ্মীরের দুটো পৃথক জাতীয় সংগীত ছিল। একটি রাজ্যের এবং অন্যটি ভারতের।
১০. সংসদের আইন প্ৰয়োগের অধিকারঃ ৩৭০ ধারা বাতিলের আগে প্ৰতিরক্ষা,বিদেশ বিষয়ক,অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া রাজ্য সরকার কোনও আইন প্ৰণয়ন করতে চাইলে সংসদের অনুমোদনের প্ৰয়োজন হতো। কিন্তু এখন ৩৭০ ধারা অবলুপ্ত হওয়ায় কোনও আইন রূপায়ণ করতে চাইলে সংসদের রাজ্য সরকারের অনুমতি বা অনুমোদনের প্ৰয়োজন পড়বে না। সংসদ চাইলে রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই রাজ্যের নাম ও সীমানা পর্যন্ত পাল্টে দিতে পারবে।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা হারাচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর,আসছে পরিবর্তনের জোয়ার