অলোক বার্মার বিরুদ্ধে দুসপ্তাহের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে সিভিসিকে নির্দেশ সুপ্ৰিমকোর্টের

নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্ৰীয় তদন্ত ব্যুরোর(সিবিআই)ডিরেক্টর অলোক বার্মার বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ নিয়ে দুসপ্তাহের মধ্যে তদন্ত সারতে সেন্ট্ৰাল ভিজিল্যান্স কমিশনকে(সিভিসি)শুক্ৰবার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্ৰিমকোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের অবসরপ্ৰাপ্ত বিচারপতি এ কে পট্টনায়েককে গোটা তদন্ত প্ৰক্ৰিয়ার তদারক করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামি ১২ নভেম্বর শীর্ষ আদালতে এই মামলার শুনানি হবে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শীর্ষ আদালত এদিন খোলাখুলি জানিয়ে দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সিবিআই প্ৰধান এম নাগেশ্বর রাও এসময়ে কোনও নীতিগত ও বড় ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। ১২ নভেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত কোর্ট রাওকে শুধু রুটিন মাফিক দায়িত্ব পালন করতে বলেছে।
কেন্দ্ৰীয় সরকারের গত মঙ্গলবার জারি করা বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অলোক বার্মা যে আবেদন জানিয়েছিলেন তারই পরিপ্ৰেক্ষিতে সুপ্ৰিমকোর্টের প্ৰধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বেঞ্চ শুক্ৰবার ওই নির্দেশ দেয়। বার্মা তাঁর আবেদনে দাবি করেছেন,তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছে। মাঝ রাতে তাঁকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্ৰ অনৈতিক ও অসাংবিধানিক কাজ করেছে বলে আবেদনে উল্লেখ করেছেন বার্মা। কোর্ট এসব ব্যাপারে ১২ নভেম্বরের মধ্যে জবাব দিতে সিবিআই,কেন্দ্ৰীয় সরকার ও সিভিসিকে নোটিশ দিয়েছে। কারণ ১২ নভেম্বরই হবে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
প্ৰধান বিচারপতি গগৈ ছাড়াও এই বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি সঞ্জয় কৃষেন কাউল এবং বিচারপতি কেএম যোসেফ। বেঞ্চ আরও বলেছে,তদন্তের পালা শেষ হওয়ার পর তা সিল করা খামে শীর্ষ আদালতে জমা দিতে হবে। বেঞ্চ এটা স্পষ্ট করে দিয়েছে তদন্তের কাজ দীর্ঘায়িত করা হলে সেটা রাষ্ট্ৰের স্বার্থের ক্ষেত্ৰে ঠিক হবে না। সিবিআই-র স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্থানা অবং অলোক বার্মার মধ্যে প্ৰায় বছর খানেক আগে থেকেই কাজিয়া চলছিল। গত রবিবার এই কোন্দল চরমে ওঠে। মাংস রপ্তানিকারণ মইন কুরেশির মামলা নিয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডে জড়িত থাকার অভি্যোগ আনেন। উভয় সিবিআই কর্তার এই কাজিয়া দেশের সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থাটির ভিত নাড়িয়ে দেয় রাতারাতি।
স্পেশাল ডিরেক্টর আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর গ্ৰেপ্তার এড়াতে আস্থানা সিবিআই-র নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আস্থানার গ্ৰেপ্তারিতে স্থগিতাদেশ জারি করে। ঘুষকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ডিরেক্টর অলোক বার্মা যাবতীয় মামলার দায়িত্ব থেকে আস্থানাকে সরিয়ে দেন। নামকা ওয়াস্তে আস্থানা স্পেশাল ডিরেক্টর থাকলেও তাঁর সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। সিবিআই-র দুই শীর্ষকর্তার দ্বন্দ্ব চরমে ওঠায় মঙ্গলবার মাঝ রাতে তদন্তকারী সংস্থার অভ্যন্তরীণ চিত্ৰ এক নতুন মোড় নেয়। এরপর বুধবার কেন্দ্ৰীয় সরকার আচমকা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে অলোক বার্মা ও আস্থানাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এরপরই এম নাগেশ্বর রাওকে সিবিআই-র ডিরেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু সুপ্ৰিমকোর্ট শুক্ৰবার এক নির্দেশে রাওকে শুধু রুটিন মাফিক কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ১২ নভেম্বর মামলার শুনানি না হওয়া পর্যন্ত রাওকে বড় ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নিতেও বারণ করে দিয়েছে শীর্ষ আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে ভেনুগোপাল কোর্টকে বলেন,শুধু বার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হলেই চলবে না,তদন্ত ঽওয়া চাই আস্থানার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগেরও। এর জবাবে প্ৰধান বিচারপতি গগৈ বলেন,‘আমার এখান বার্মার বিষয়টি নিয়ে ভাবছি’। এদিকে ডিরেক্টর নাগেশ্বর রাও দায়িত্ব নেওয়ার পর শুক্ৰবার পর্যন্ত যে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা একটা বন্ধ খামে ১২ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে সরকার এই মামলায় সুপ্ৰিমকোর্টের হস্তক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে এবং বলেছে,এতে তদন্ত প্ৰক্ৰিয়া জোরদার হবে এবং নিরপেক্ষভাবে সত্য উদঘাটনে সাহায্য করবে।