অসমে ৫ ও ৯ ডিসেম্বর দুদফায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হচ্ছে

গুয়াহাটিঃ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন আগামি ১৫ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে গৌহাটি হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্ৰেক্ষিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশন(এসইসি)সোমবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট জারি করেছে। ঘোষিত বিজ্ঞপ্তি অনু্যায়ী রাজ্যের ১৪টি সিভিল সাব ডিভিশন সহ ২৬টি জেলায় আগামি ৫ ও ৯ ডিসেম্বর দুদফায় ত্ৰিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের গ্ৰামাঞ্চলে আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি প্ৰযোজ্য হলো।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজ্য নির্বাচন বিভাগের কমিশনার হরেন্দ্ৰনাথ বরা বলেন,‘পঞ্চায়েত নির্বাচন ব্যালট পেপারের মাধ্যমেই অনুষ্ঠিত হবে। প্ৰথম দফার পঞ্চায়েত ভোট হচ্ছে ৫ ডিসেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ভোট হবে ৯ ডিসেম্বর। দুদিনই সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলবে ভোট গ্ৰহণ’। পঞ্চায়েত নির্বাচন বাবদ ব্যয়ের প্ৰসঙ্গে তিনি বলেন,‘গোটা প্ৰক্ৰিয়ায় রাজকোষের ১৪৯,৯১ কোটি টাকা খরচ হবে’। পুরো প্ৰক্ৰিয়া সম্পন্ন করতে ১,৫৬,২৫৫ জন সরকারি কর্মীকে কাজে লাগানো হবে।
প্ৰথম দফায় বিশ্বনাথ,চরাইদেউ, দরং,ধেমাজি,ডিব্ৰুগড়,গোলাঘাট,যোরহাট,কামরূপ,কামরূপ(মেট্ৰো),লখিমপুর,মাজুলি,মরিগাঁও,নগাঁও,তিনসুকিয়া,শিবসাগর ও শোণিতপুর ইত্যাদি ১৬টি জেলায় ভোট হচ্ছে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় দফায় মোট ১০টি জেলা- বরপেটা,বঙাইগাঁও,কাছাড়,ধুবড়ি,গোয়ালপাড়া,হাইলাকান্দি,হোজাই,করিমগঞ্জ,দক্ষিণ শালমারা,মানকাচর ও নলবাড়িতে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। প্ৰথম দফার নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্ৰ দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর। ১৯ নভেম্বর মনোনয়ন পত্ৰ প্ৰত্যাহারের দিন ধার্য হয়েছে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের ক্ষেত্ৰে মনোনয়ন পত্ৰ প্ৰত্যাহারের দিন ধার্য হয়েছে ২২ নভেম্বর। এবার মোট ১,৫৬,৪১,৪৫৬ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্ৰয়োগ করবেন। মোট ভোটারের মধ্যে ৮১,২৩,৮৩৫ জন পুরুষ এবং ৭৫,১৭,৬২১ জন মহিলা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মোট ভোট কেন্দ্ৰ থাকছে ২৩,৫০৫টি। এরমধ্যে ৮২৪৩টি কেন্দ্ৰকে স্পর্শকাতর এবং ৩,৬৬৫টি কেন্দ্ৰকে অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এবছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪২০ জন জেলা পরিষদ সদস্য(জেপিএস),২,১৯৯ জন আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য(এপিএস)২,১৯৯ জন গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য(জিপিপি)এবং ২১,৯৯০ জন গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য(জিপিএম)নির্বাচন করা হবে। প্ৰার্থীদের খরচের পরিমাণও ধার্য করে দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ সদস্যদের জন্য খরচের সর্বোচ্চ সীমা ধার্য হয়েছে ৬,৪০,০০০ টাকা। আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য পদের প্ৰার্থীরা ১.৬০ লক্ষ টাকা, গ্ৰাম পঞ্চায়েত সভাপতি পদের প্ৰার্থীরা ১.৬০ লক্ষ টাকা ও গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য পদের প্ৰার্থীরা সর্বোচ্চ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় করতে পারবেন।
১৯৯৪ সালের অসম পঞ্চায়েত আইনের সাম্প্ৰতিক সংশোধনের প্ৰেক্ষিতে পঞ্চায়েত ভোটে প্ৰার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা,দুই সন্তান থাকার বিধি এবং সেনিটারি টয়লেট ইত্যাদি বিষয় প্ৰযোজ্য হচ্ছে। সংশোধিত ওই আইনে যাদের দুইয়ের বেশি জীবিত সন্তান রয়েছে তারা ভোটে লড়তে পারবেন না। এক বা একাধিক পত্নীর ক্ষেত্ৰেও এই একই নিয়ম প্ৰযোজ্য হচ্ছে। তবে আইন সংশোধনের আগে যারা দুই সন্তানের জনক ছিলেন তাদের ক্ষেত্ৰে এটা কার্যকরী হচ্ছে না। অর্থাৎ ২০১৮-র ১৯ মার্চের আগে যাদের দুইয়ের বেশি ছেলেমেয়ে ছিল তাদের ভোটে লড়ার ক্ষেত্ৰে কোনও বাধা নেই। কিন্তু আইন চালু হওয়ার পর যারা তৃতীয় সন্তানের পিতা হয়েছেন তারা পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে পারবেন না।
এছাড়াও সংশোধিত পঞ্চায়েত আইন অনু্যায়ী পঞ্চায়েত প্ৰতিনিধিদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও কার্যকরী হচ্ছে এবার।সেই অনু্যায়ী জেলা পরিষদে লড়তে হলে সাধারণ প্ৰার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা হায়ার সেকেন্ডারি উত্তীর্ণ বা সমতুল্য ডিগ্ৰি থাকা চাই। তবে তফশিলি জাতি,উপজাতি ও অনগ্ৰসর শ্ৰেণির প্ৰার্থীদের ম্যাট্ৰিক পাস হতে হবে। আঞ্চলিক পঞ্চায়েত সদস্য ও গ্ৰাম পঞ্চায়েত সভাপতি পদে প্ৰার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্ৰিক পাস ও সমতুল্য হওয়া চাই। তবে তফশিলি জাতি,উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্ৰসর শ্ৰেণির ক্ষেত্ৰে অষ্টম শ্ৰেণি উত্তীর্ণ হতে হবে। গ্ৰাম পঞ্চায়েত সদস্য পদে প্ৰার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ষষ্ঠ শ্ৰেণি উত্তীর্ণ বা সমতুল্য হওয়া চাই। তবে তফশিলি জাতি,উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্ৰসর শ্ৰেণির শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও চলবে। তাছাড়া পঞ্চায়েত ভোটে লড়তে হলে প্ৰার্থীদের বাড়িতে সেনিটারি টয়লেট থাকা চাই।