ধুবড়িঃ স্বাধীনতার পর থেকেই ৪ নং ধুবড়ি লোকসভা আসনটি কংগ্ৰেসের শক্ত দুর্গ ছিল। তবে মাঝে প্ৰজাতন্ত্ৰ সোশ্যালিস্ট পার্টি(পিএসপি),কংগ্ৰেস(এস)এবং গোলাম ওসমানির ইউনাইটেড মাইনোরিটিস ফ্ৰন্ট(ইউএমএফ)আসনটি কব্জা করতে সফল হয়েছিল। ২০০৪ সাল পর্যন্ত ধুবড়ির ভোটাররা কংগ্ৰেসকেই সমর্থন দিয়ে এসেছেন। তবে ২০০৬ সালে এআইইউডিএফ-এর উত্থান এবং বদরুদ্দিন আজমল এই দলের সুপ্ৰিমো হওয়ার পর থেকে রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে আজমল দক্ষিণ শালমারা বিধানসভা কেন্দ্ৰে কংগ্ৰেসের হেভিওয়েট প্ৰার্থী ওয়াজেদ আলি চৌধুরীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। সেবার আজমল ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে চৌধুরীকে হারিয়েছিলেন। পরে ২০০৯ সালে আজমল লোকসভার নির্বাচনে লড়ে প্ৰতিদ্বন্দ্বী কংগ্ৰেস প্ৰার্থীকে ব্যাপক ভোটে পরাস্ত করেছিলেন। ২০১৪ সালেও আজমল এই আসনটি ধরে রাখেন।
তবে এবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই আসনে আজমলের জয় নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিছুটা আশঙ্কা প্ৰকাশ করেছেন। কারণটা হলো কংগ্ৰেসের সঙ্গে এআইইউডিএফ-এর গোপন বোঝাপড়া,যা বিভিন্ন প্ৰচার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই প্ৰকাশ পেয়েছে। ‘ওই পরিকল্পনা অনু্যায়ী আজমল চেয়েছিলেন,কংগ্ৰেস দুর্বল প্ৰার্থীদের ধুবড়ি,বরপেটা ও করিমগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্ৰে দাঁড় করাক। এর পরিবর্তে বাকি ১১ কেন্দ্ৰে এআইইউডিএফ প্ৰার্থী দেওয়া থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্ৰে কংগ্ৰেস এই তিন কেন্দ্ৰে শক্তিশালী প্ৰার্থীদেরই দাঁড় করিয়েছে’-উল্লেখ করেন একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক।
গোলকগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্ৰ থেকে দুদুবার বিধায়ক নির্বাচিত আবু তাহের বেপারিকে ধুবড়ি লোকসভা কেন্দ্ৰে প্ৰার্থী করেছে কংগ্ৰেস। এধরনের গোপন সমঝোতাকে পাত্তা দেওয়ার যে মানসিকতা কংগ্ৰেসের নেই বেপারিকে প্ৰার্থী করে তার স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে কংগ্ৰেস। তাই বেপারির বিরুদ্ধে লড়াই আজমলের কাছে যথেষ্ট কঠিন হয়ে উঠবে।
২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে আজমল পেয়েছিলেন ৫,৪০,৮২০টি ভোট। সেবার কংগ্ৰেস প্ৰার্থী আনোয়ার হুসেন মোট ভোট পেয়েছিলেন ৩,৫৬,৪০১টি। অনুরূপভাবে ২০১৪ সালে আজমলের ঝুলিতে পড়ে ৫,৯২,৬৬৯টি ভোট। কংগ্ৰেস প্ৰার্থী ওয়াজেদ আলি চৌধুরীর পান ৩,৬২,৮৩৯ ভোট। কিন্তু এবার পুরো নির্বাচনি চালচ্চিত্ৰটাই আলাদা। কেন্দ্ৰটিতে আজমলের সমর্থনের ভিত কিছুটা নড়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধুবড়ি সংসদীয় আসনে এবার ১৫ জন প্ৰার্থী লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন।
ধুবড়ি লোকসভা আসনের অধীনে ১০টি বিধানসভা কেন্দ্ৰ রয়েছে। এগুলো হলো ধুবড়ি,দক্ষিণ শালমারা,মানকাচর এবং গোয়ালপাড়া জেলা। তবে বিজেপি এবার এই কেন্দ্ৰে সরাসরি না লড়ে মিত্ৰ জোট অগপকে লড়ার সু্যোগ করে দিয়েছে। অগপ এই কেন্দ্ৰে জাভেদ ইসলামকে তাদের প্ৰার্থী করেছে। তবে কেন্দ্ৰটিতে কংগ্ৰেসের আবু তাহের বেপারি,এআইইউডিএফ-এর বদরুদ্দিন আজমল ও অগপ-র জাভেদ ইসলামের মধ্যে ত্ৰিমুখী লড়াই হবে। কেন্দ্ৰটিতে তৃণমূল কংগ্ৰেসের পক্ষে লড়াইয়ে আছেন নুরুল ইসলাম চৌধুরী। অগপর জাভেদ ইসলাম হচ্ছেন ধুবড়ি জেলার প্ৰবীণ কংগ্ৰেস নেতা এবং প্ৰাক্তন মন্ত্ৰী জেহিরুল ইসলামের ছেলে। ২০০৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্ৰেসের টিকিট না পেয়ে জাভেদ মানকাচর বিধানসভা কেন্দ্ৰে নির্দল হিসেবে লড়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। কংগ্ৰেসের প্ৰাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর জাভেদ কয়েক মাস আগে অগপতে যোগ দেন।
ধুবড়ি লোকসভা কেন্দ্ৰে এবং মোট ভোটার হলেন ১৮,৪৫,১১৯ জন। এরমধ্যে ৯,৪৪,০২৫ জন পুরুষ এবং ৯,০১,১৭৪ জন মহিলা ভোটার। ভোট কেন্দ্ৰ হচ্ছে ২,৪৫০টি। নির্বাচন হচ্ছে আগামি ২৩ এপ্ৰিল।