নাটক জমে উঠেছে সিবিআই-র অন্দরে,মাঝরাতে ডিরেক্টর ভার্মাকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ কেন্দ্ৰের

নয়াদিল্লিঃ কেন্দ্ৰীয় তদন্ত ব্যুরোর(সিবিআই)অভ্যন্তরে চলা জটিলতা বুধবার রাতে রীতিমতো নাটকীয় মোড় নেয়। সিবিআই-র স্পেশাল ডিরেক্টর রাকেশ আস্তানা ও ডিরেক্টর অলোক ভার্মার মধ্যে কাজিয়া তদন্তকারী সংস্থাটির ভিত নাড়িয়ে দেয়। স্পেশাল ডিরেক্টর আস্থানার বিরুদ্ধে ঘুষ কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার পর গ্ৰেপ্তার এড়াতে সিবিআই-র তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আস্থানা মঙ্গলবার দিল্লি হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্ট ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আস্থানার গ্ৰেপ্তারিত স্থগিতাদেশ জারি করে। এদিকে সিবিআই ডিরেক্টর অলক ভার্মা ঘুষকাণ্ডে জড়িত অভি্যোগে আস্থানাকে যাবতীয় মামলার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেন। আস্থানা নামকা ওয়াস্তে স্পেশাল ডিরেক্টর থাকলেও তার সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। এমনকি সাময়িক সাসপেন্ডও করা হয় আস্থানাকে। সিবিআইর দুই শীর্ষ কর্তার দ্বন্দ্ব চরমে ওঠায় মঙ্গলবার মাঝ রাতেই তদন্তকারী সংস্থার অভ্যন্তরীণ চিত্ৰ এক নতুন মোড় নেয়। দিল্লির সিবিআই সদর দপ্তরে দফায় দফায় বৈঠক বসে। বুধবার মাঝরাতে কেন্দ্ৰীয় সরকার এক আচমকা বিজ্ঞপ্তি জারি করে অলোক ভার্মাকে ডিরেক্টর পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় আস্থানাকেও। সিবিআই-র প্ৰধান হিসেবে ভার্মার আরও দুমাস পদে বহাল থাকার কথা ছিল এবং সেজন্যই তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে অপসারণ করা যাবে না। মন্ত্ৰিসভার নিয়োগ কমিটি(এসিসি)ভার্মার বিরুদ্ধে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তারা সিবিআই-র অন্তর্বর্তীকালীন ডিরেক্টর হিসেবে কাজ দেখাশোনা করতে সংস্থার অন্যতম জয়েণ্ট ডিরেক্টর এম নাগেশ্বর রাওকে নির্দেশ দেয়। বলতে গেলে এদিন সিবিআই-র উপর মহলের খোলনলচে পাল্টে দেওয়া হয়।
মধ্যরাতে সরকারের এই নির্দেশে নিশ্চুপ না থেকে ভার্মা ওই বিজ্ঞপ্তির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্ৰিমকোর্টে আপিল করেছেন। আপিলে ভার্মা বলেছেন,সরকার মাঝরাতে বেআইনিভাবে তাঁকে ছুটিতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এদিকে সর্বোচ্চ আদালত বুধবার বলেছে,কেন্দ্ৰীয় সরকার ভার্মাকে ছুটিতে যেতে নির্দেশ দেওয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভার্মা যে আপিল করেছেন,তা নিয়ে আদালতে শুনানি হবে শুক্ৰবার। এদিকে বিরোধী দল কংগ্ৰেসের মুখপাত্ৰ রণদীপ সুরজেওয়ালা টুইট করে বলেন,দেশের অন্যতম তদন্তকারী সংস্থার অভ্যন্তরে গোপনে হস্তক্ষেপ করে মোদি সরকার সিবিআই-র স্বাধীনতাকে কবর দিয়েছে।
আম আদমি পার্টির সুপ্ৰিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্ৰী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন,সিবিআই-র ডিরেক্টরকে ছুটিতে পাঠানোর কারণ কি? লোকপাল আইনে নিযুক্ত তদন্তকারী সংস্থার প্ৰধানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কর্তৃত্ব মোদি সরকার কোনও আইনে পেলেন? আসলে মোদি সরকার কি লুকোতে চাইছে-প্ৰশ্ন তোলেন কেজরিওয়াল।
এদিকে সিবিআই মঙ্গলবার ডেপুটি পুলিশ সুপার দেবেন্দার কুমারকে সাসপেন্ড করেছে। মাংস রফতানিকারক মইন কুরেশির বিরুদ্ধে প্ৰতারণা ও জালিয়াতি মামলা বন্ধ করার জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আস্থানা ও দেবেন্দারের বিরুদ্ধে। কুরেসির বিরুদ্ধে ওঠা মামলার বয়ান পাল্টানোর অভিযোগে সোমবার দেবেন্দারকে গ্ৰেপ্তার করা হয়। কুরেশি মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন দেবেন্দার। অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ট্ৰায়াল কোর্ট মঙ্গলবার দেবেন্দারকে সাতদিনের জন্য সিবিআই-র হেফাজতে পাঠিয়েছে।