আটারি(পঞ্জাব): পাকিস্তানের হেফাজতে টানা দুদিন বন্দি থাকার পর অবশেষে দেশের মাটিতে পা রাখলেন ভারতীয় বায়ুসেনা তথা ভারতের গর্ব উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্থমান। সেই সঙ্গে অবসান ঘটলো দেশ জুড়ে চলা রুদ্ধশ্বাস উৎকণ্ঠার। শুক্ৰবার রাত ৯-২১ মিনিটে অভিনন্দনকে ভারতীয় আধিকারিকদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয় পাকিস্তান। সুস্থ শরীরে মাতৃভূমিতে ফিরে আসায় দেশবাসী বীরের মর্যাদায় কুর্নিশ জানান অভিনন্দনকে। তাঁর পরনে ছিল নীল কোট,ধূসর রঙের ট্ৰাউজার ও সাদা শার্ট। ভারত-পাক সীমান্তের জিরো লাইনে অভিনন্দনকে স্বাগত জানান বিএসএফ-এর পদস্থ আধিকারিক। অমৃতসরের জেলাশাসক শিবদুলার সিং ধীলন,আইএএফ ও সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারাও উইং কমান্ডারকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন। ‘ঘরে ফিরে এসে আমি আনন্দিত –দেশের মাটিতে পা রেখে এটাই ছিল অভিন্দনের প্ৰথম প্ৰতিক্ৰিয়া। ওয়াঘা সীমান্ত অবধি অভিনন্দনকে পৌঁছে দিতে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এসেছিলেন গ্ৰুপ ক্যাপ্টেন জেডি কুরিয়ান। তাঁকে ঘিরে ছিল পাক রেঞ্জার্সের সশস্ত্ৰ সান্ত্ৰীরা। সূত্ৰটি জানাচ্ছে,শুক্ৰবার বিকেল চারটের পর অভিনন্দনকে ওয়াঘা সীমান্তে নিয়ে আসা হলেও পাকিস্তান নানা অজুহাতে তাঁর প্ৰত্যর্পণে অহেতুক দেরি করে। আর এই দেরির কোনও ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। তবে এদিন আটারির যৌথ চেকপোস্ট নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল।
এয়ার ভাইস মার্শাল আরজিকে কাপুর সাংবাদিকদের বলেন,‘ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্ৰোসিডিউর অনু্যায়ী উইং কমান্ডারকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে’। ‘এরপর অভিনন্দনের বিস্তারিত মেডিক্যাল চেক-আপ করা হবে। এটা বাধ্যতামূলক। কারণ প্যারাসুটে অবতরণের সময় পুরো শরীরে একটা বিরাট চাপ সৃষ্টি হয়’-বলেন ভাইস মার্শাল।
গত বুধবার ভারতের আকাশ সীমা লঙ্ঘনকারী পাক বিমানের পিছু তাড়া করে ভারতের দুটো মিগ-২১ আকাশে উড়ান দিয়েছিল। এর একটিতে ছিলেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। বীরদর্পে আকাশেই পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ লড়াকু বিমান ধ্বংস করতে সফল হন অভিনন্দন। কিন্তু এর পরই পাকিস্তান তাঁর মিগ বিমানটি গুলি করে নামায়। অদম্য সাহসের সঙ্গে প্যারাসুটে অবতরণ করলেও প্ৰতিকূল হাওয়া তাঁকে নিয়ে ফেলে পাকিস্তানের মাটিতে। এরপরই অভিনন্দনকে আটক করে পাক সেনা। এদিকে ভারত উইং কমান্ডারের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করে। ভারতের ১৩০ কোটি মানুষ সমস্বরে আওয়াজ তোলেন অভিন্দনের মুক্তি চেয়ে। আন্তর্জাতিক সম্প্ৰদায় থেকে পাকিস্তানের ওপর চাপ আসতে থাকে। অবশেষে পাক প্ৰধানমন্ত্ৰী ইমরান খান বৃহস্পতিবার পাক সংসদে ঘোষণা করেন শুক্ৰবার ভারতীয় বায়ু সেনার বীরপাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা। সীমান্তে উত্তেজনা প্ৰশমনে উভয় দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনারও প্ৰস্তাব দিয়েছেন ইমরান।
এদিকে উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে শুক্ৰবার রাতেই বায়ু সেনার বিমানে দিল্লিতে উড়িয়ে আনা হয়। এদিন ওয়াঘা সীমান্তে প্ৰচুর সাধারণ মানুষও ভিড় জামিয়েছিলেন দেশের হিরোকে কুর্নিশ জানাতে। সুস্থ দেহে দেশে ফেরায় বীর অভিনন্দনকে অভিনন্দন জানিয়ে এক টুইট করেছেন প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদিও।