রঙালি বিহু ঘিরে উৎসবের মেজাজে গোটা অসম

রঙালি বিহু ঘিরে উৎসবের মেজাজে গোটা অসম

গুয়াহাটিঃ কোকিলের কুহু তান,গাছে গাছে কচি কিশোলয়ের সবুজ সমারোহ,বন বাদাড়ে কপৌফুলের বর্ণিল শোভা,বসন্তের ছোঁয়ায় অসমের প্ৰকৃতি সেজে ওঠে নান্দনিক রূপে। পাহাড়,সমতল সহ সর্বত্ৰ এসময়ে দেখা যায় উচ্ছাস,আশা,আনন্দের এক প্ৰবহমান ধারা। প্ৰকৃতির বুকে সাজো সাজো রব,রঙালি বিহুর আগমনের আগাম সঙ্কেত। এসময়ে প্ৰকৃতির ছন্দে তাল মিলিয়ে নেচে ওঠে অসমিয়া মানুষের হৃদয়,মন। প্ৰাণের চেয়ে প্ৰিয় রঙালি বিহুকে স্বাগত জানাতে মরিয়া এখন অসমবাসী।

ঢোল,পেপা,গণনার সুরে মাতোয়ারা রাজ্যের আবাল,বৃদ্ধ,বনিতা। বিশেষ করে ডেকা গাভরুদের(যুবক-যুবতী)মনে রঙালি বিহুর মরশুমে এক বাঁধন ছাড়া আনন্দ-ধারা। উড়ু উড়ু মন সবার। বিহু আসলে প্ৰকৃতি কেন্দ্ৰিক উৎসব। বসন্তের বাতাসে প্ৰকৃতির বুকে যখন দোলা লাগে,তখনই আসে রঙালি বিহু। বিহু গীত আর নাচ এখানকার মানুষের জীবনশৈলি। বিহুতেই নিহিত অসমিয়া জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও পরম্পরা। স্বকীয়তায় ভাস্কর রঙালি বিহু। এই সময়ে কোনও অসমিয়া ঘরে বসে থাকতে পারেন না। ঢোল,পেপার শব্দ তাদের আবহমান কাল থেকে হাতছানি দিয়ে আসছে। একটা সময় গেছে যখন বিভিন্ন গ্ৰামগঞ্জে,নদীর পাড়ে,খেতের মাঠে কিংবা গাছের নিচে বিহুগীত আর নাচের চল ছিল। অসমের নান্দনিক প্ৰকৃতির কোলে বিহুয়াদের এই নাচ গান প্ৰকৃতি আর মানুষের মেলবন্ধনের নৈসর্গিক দৃশ্যকেই তুলে ধরতো। অসমের গাঁয়ে ভুয়ে মুক্ত বিহু আজও পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। সে সময় বাড়ি বাড়ি গিয়েও বিহু গীত ও নাচের আসর বসতো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ওই রেওয়াজ এখন প্ৰায় বিস্মৃতির অতলে যেতে বসেছে।

প্ৰকৃতির বুক ফাঁকা করে বিহুর মঞ্চায়ন হয়েছে অনেক বছর আগেই। বিহু নাচ-গানের সেই শৈলি ,সেই ব্যাকরণ আজও অম্লান,অক্ষত। অভাব শুধু প্ৰকৃতির। কারণ মঞ্চে একটা জ্যান্ত প্ৰকৃতিকে তুলে ধরা সহজ সাধ্য নয়। আজকাল অনেক গ্ৰামও শহরের আকার নিয়েছে। ফলে ওই সব গ্ৰামেও আজ মঞ্চ বিহুর প্ৰাধান্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে মুক্ত অথবা মঞ্চ যেখানেই হোক,বিহু চিরন্তন পরম্পরাকে জিইয়ে রাখাই বড় কথা।

বর্তমানে শহরাঞ্চলে মঞ্চ ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ শহরে স্থানাভাবও মুক্ত বিহু আয়োজনের ক্ষেত্ৰে অন্তরায়। তবুও বলবো,রাজ্যে কিছু কিছু গ্ৰাম যেখানে খোলা মাঠে,নদীর পাড়ে কিংবা গাছ তলায় বিহু নাচিয়েরা ঢোল,পেপার তাল ও সুরে নিজেদের পরম্পরাকে ধরে রেখেছেন সেই ধারাও অক্ষয়,অম্লান থাকুক। পাশাপাশি মঞ্চ বিহু তো আছেই। মোদ্দা কথায় অসমের এই সমৃদ্ধ পরম্পরাকে বাঁচিয়ে রাখা ভবিষ্যৎ প্ৰজন্মের দায়িত্ব।

রঙালি বিহু অসমিয়ার সংস্কৃতি,পরম্পরা। বিহু অসমিয়া জাতির জাতীয় দর্পণ। রঙালি বিহুর এই বর্ণময় রূপকে শুধু অসমের চারসীমায় আবদ্ধ না রেখে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সময় সমাগত। উদ্যোক্তদের চোখ,কান খুলে বিহুর বিশ্বজনীনতার জন্য বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। তবেই বিশ্ব দরবারে অবারিত হবে অসমের দ্বার। রবিবার গরু বিহু পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে রঙালি বিহু। গুয়াহাটিতে বিভিন্ন বিহু সম্মিলনী ইতিমধ্যেই মঞ্চ সাজিয়ে তুলেছে। ১৪ এপ্ৰিল থেকে তিন,চারদিন মঞ্চগুলিতে চলবে অনুষ্ঠান। রবিবার রঙালি বিহুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে হবে বর্ষবরণ।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com