গুয়াহাটিঃ রাজ্যে বন্যা ও ভূমিস্খলন সংহারী রূপ নিয়েছে। বন্যার বিধ্বংসী থাবায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও তিনজন ব্যক্তি প্ৰাণ হারিয়েছেন। এই নিয়ে চলতি বন্যা ও ধসে রাজ্যে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ছয়জনে দাঁড়ালো। বর্তমানে রাজ্যের ২১টি জেলা বন্যার কবলে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও ট্ৰেন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় গোলাঘাট ও ডিমা হাসাও জেলায় বন্যা ও ধসে তিন জন ব্যক্তি প্ৰাণ হারিয়েছেন। বন্যায় এপর্যন্ত ক্ষতিগ্ৰস্তের সংখ্যা বেড়ে ৮.৬৯ লক্ষ্যে পৌঁছেছে। ৬৮টি রাজস্ব সার্কলের ১,৫৫৬টি গ্ৰাম বানভাসি হয়েছে। এই সব বন্যা কবলিত গ্ৰাম ধেমাজি,লখিমপুর,বিশ্বনাথ,শোণিতপুর,দরং,বাকসা,বরপেটা,নলবাড়ি,চিরাং,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,গোয়ালপাড়া,মরিগাঁও,হোজাই,নগাঁও,গোলাঘাট,মাজুলি,যোরহাট,শিবসাগর,ডিব্ৰুগড় ও তিনসুকিয়া জেলায় অন্তর্গত।
রাজ্যের বেশকটি নদীর জল বর্তমানে বিপদ সঙ্কেতের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। যোরহাট,শোণিতপুর,কামরূপ,গোয়ালপাড়া এবং ধুবড়ি জেলায় ব্ৰহ্মপুত্ৰ রুদ্ৰরূপ ধারণ করেছে। ডিব্ৰুগড়ে বুড়িদিহিং,শিবসাগরে দিশাং,গোলাঘাটে ধনশিরি,শোণিতপুরে জিয়া ভরলি,নগাঁওয়ে কপিলি,কামরূপে পুঠিমারি,বরপেটায় বেকি,হাইলাকান্দিতে কাটাখাল এবং করিমগঞ্জ জেলায় কুশিয়ারা বিপদ সীমা অতিক্ৰম করেছে।
এদিকে ন্যাশনাল ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্স(এনডিআরএফ)এবং স্টেট ডিজেস্টার রেসপন্স ফোর্স(এসডিআরএফ)টিম ক্ষতিগ্ৰস্ত এলাকায় বানভাসিদের খোঁজ নেওয়া ছাড়াও উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। বর্তমানে ধেমাজি,লখিমপুর,বাকসা,নলবাড়ি,চিরাং,কোকরাঝাড়,গোলাঘাট,মাজুলি,যোরহাট,ডিব্ৰুগড় এবং তিনসুকিয়া জেলায় মোট ৬৮টি ত্ৰাণ শিবির খোলা হয়েছে। এই সব ত্ৰাণ শিবিরে আশ্ৰয় নিয়েছেন মোট ৭,৬৪৩ জন বন্যাপীড়িত মানুষ। ধেমাজি,লখিমপুর,নলবাড়ি,গোলাঘাট,মাজুলি,যোরহাট এবং তিনসুকিয়া জেলায় ৪৮টি ত্ৰাণ বণ্টন শিবির কর্মক্ষম রয়েছে।
এদিকে প্ৰচণ্ড বৃষ্টির জন্য শুক্ৰবার বরাক উপত্যকা ও ত্ৰিপুরায় ট্ৰেন চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টিতে লামডিং-বদরপুর পাহাড় লাইনে ট্ৰ্যাকের ক্ষতি হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক পিজে শর্মার মতে,জাটিঙ্গা-লুমপার এবং নিউ হারাঙ্গাজাও স্টেশনে লাইনের ক্ষতি হয়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষ চারটি ট্ৰেনের যাত্ৰা বাতিল অথবা টার্মিনেট করতে বাধ্য হন।
শুক্ৰবার সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে ডিমা হাসাও জেলার জীবন রেখা লামডিং-শিলচর ব্ৰজগেজ। ফলে বরাক ও ত্ৰিপুরা দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে রেল লাইনের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। আবার কোথাও কোথাও পাহাড় বেয়ে নেমে আসা বালি,পাথরে লাইন আটকে পড়েছে। তবে রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং ও শ্ৰমিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন পরিস্থিতির খোঁজ নিতে। এদিকে কাজিরঙা জাতীয় উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে ব্ৰহ্মপুত্ৰের জল ঢুকে পড়েছে। বন্য জীব-জন্তুরা উঁচু স্থানে আশ্ৰয় নিয়েছে। কিছু কিছু বন্য প্ৰাণী কার্বি আংলং পাহাড়ের দিকে চলে গেছে আশ্ৰয়ের খোঁজে। বনকর্মীরা নৌকো ও ভুটভুটি নিয়ে বনাঞ্চলে টহল দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত,ক্ষতিগ্ৰস্ত ৪ লক্ষেরও বেশি