বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্ৰস্ত ১৪ লক্ষের বেশি,আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে শঙ্কিত দিশপুর

বন্যায় ৮ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্ৰস্ত ১৪ লক্ষের বেশি,আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসে শঙ্কিত দিশপুর
Published on

গুয়াহাটিঃ মহানগরীর বরঝাড়স্থিত আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে,আগামি ৪৮ ঘণ্টায় অসমে অবিরাম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির সম্ভাবনায় দিশপুর রীতিমতো আশঙ্কিত।

রবিবার বিকেলে গুয়াহাটি সার্কিট হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজস্ব ও দুর্যোগ প্ৰশমন বিভাগের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব কুমার সঞ্জয় কৃষ্ণ বলেন,আবহাওয়া বিভাগ আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়ায় ব্ৰহ্মপুত্ৰ এবং এর উপনদী সমূহের জলপৃষ্ঠ আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি যদি লেগে থাকে তাহলে নিম্ন অসমের জেলাগুলিতে বন্যা পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।

তবে রাজ্য প্ৰশাসন যন্ত্ৰ এবং বন্যাক্ৰান্ত সব জেলা প্ৰশাসন বন্যা পরিস্থিতি সক্ৰিয়ভাবে সামাল দিতে পুরোদস্তর প্ৰস্তুত হয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়াল স্বয়ং বন্যা পরিস্থিতির প্ৰতি নজর রাখছেন। কেন্দ্ৰীয় স্বরাষ্ট্ৰ মন্ত্ৰী অমিত শাহ শনিবার এই প্ৰাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্ৰীকে কেন্দ্ৰের তরফ থেকে সম্ভাব্য সব সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন-জানান সঞ্জয় কৃষ্ণ।

তিনি বলেন,যোরহাটের নিমাতিঘাটে ব্ৰহ্মপুত্ৰ বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। তেজপুর,গুয়াহাটি,গোয়ালপাড়া এবং ধুবড়িতেও নদীর জলপৃষ্ঠ বিপদ সঙ্কেতের ওপর দিয়ে বইছে। ডিব্ৰুগড়ের খোয়াঙে বুড়িদিহিং নদী,বদতিঘাটে সুবনশিরি,নুমলিগড়ে ধনশিরি,এনটি রোডে(শোণিতপুর)জিয়া ভরলি,নগাঁও ও ধরমতুলের কামপুরে কপিলি,কামরূপে পুঠিমারি,বরপেটায় বেকি,কাছাড় ও করিমগঞ্জে বরাক,হাইলাকান্দির মাটিজুরিতে কাটাখাল,করিমগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর জল ফুলে ফেঁপে বিপদ চিহ্নের ওপর দিয়ে বইছে।

সঞ্জয় কৃষ্ণের মতে,রাজ্যের ২৫টি জেলার ৮০টি রাজস্ব সার্কলের ২,২১৭টি গ্ৰামের মোট ১৪,১৭,৪১১ জন মানুষ বানভাসি হয়েছেন প্ৰথম দফার বন্যায়। তিনি বলেন,প্ৰাকৃতিক এই দুর্যোগ এপর্যন্ত ৮ জন ব্যক্তির প্ৰাণ কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন বন্যাপীড়িত জেলায় বর্তমানে ৬২টি ত্ৰাণ শিবির খোলা হয়েছে। ১,৭২২টি ত্ৰাণ বণ্টন শিবির স্থাপন করেছে রাজ্য সরকার।

কৃষ্ণ আরও বলেন,বন্যা দুর্গতদের সাহায্যের জন্য রাজ্য সরকারের হাতে পর্যাপ্ত তহবিল রয়েছে। প্ৰাক্তন নির্বাচন কমিশনার হরিশঙ্কর ব্ৰহ্ম বলেছেন,নিম্নাঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী লোকেদের অবিলম্বে উঁচু জমি অথবা নিরাপদ আস্তানায় স্থানান্তর করা উচিত। তিনি বলেন,কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানের জীবজন্তুগুলো নিরাপত্তায় অবিলম্বে এবং অগ্ৰাধিকার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বন্যায় দিশাহারা হয়ে কাজিরঙার হরিণ,গন্ডার অন্যান্য জীবজন্তু একাংশ উঁচু স্থানে আশ্ৰয় নিয়েছে। কিছু কিছু কার্বি পাহাড়ের দিকে চলে গেছে নিরাপদ আস্তানার খোঁজে। ৩৭নং জাতীয় সড়কে বেশকটি হরিণের গাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থা(আসু)বন্যা ও ধসে যে সব এলাকায় মানুষ আটকে পড়েছেন তাদের উদ্ধার ও ত্ৰাণ সাহায্যের ব্যবস্থা করতে রাজ্য সরকারের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। আসু তাদের সব জেলা ও মহকুমা ইউনিটের সদস্যদের জলবন্দিদের উদ্ধারের কাজে ব্ৰতী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

রবিবার প্ৰচার মাধ্যমের কাছে দেওয়া এক বিবৃতিতে আসুর সভাপতি দীপাঙ্ক কুমার নাথ এবং সাধারণ সম্পাদক লুরিন জ্যোতি গগৈ বলেন,‘অসমের বন্যাকে জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করতে কেন্দ্ৰের ব্যর্থতার জন্যই রাজ্যের মানুষকে বন্যা ও ভূমিস্খলনের শিকার হতে হচ্ছে। পূর্বতন কংগ্ৰেস সরকারের মতো বর্তমান বিজেপি সরকারও উদাসীন নীতি নিয়ে চলছে। ‘দিল্লির নজর অসমের সম্পদের প্ৰতি,রাজ্যের মানুষের সদস্যার প্ৰতি নয়’-বলেন আসু নেতারা।

logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com