আজ মাঝরাত থেকে কামাখ্যায় হচ্ছে অম্বুবাচি মেলা

আজ মাঝরাত থেকে কামাখ্যায় হচ্ছে অম্বুবাচি মেলা

গুয়াহাটিঃ শক্তিপীঠ দেবীতীর্থ কামাখ্যার সেবা উৎসব অম্বুবাচি মেলা। দীর্ঘ এক বছর প্ৰতীক্ষার পর গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ের বুকে কামাখ্যা ধামে আজ মাঝরাত থেকে শুরু হতে চলেছে অম্বুবাচি মেলা। রাত ১টা ৪০ মিনিটে শুরু হচ্ছে অম্বুবাচির প্ৰবৃত্তি। ২৬ জুন দুপুরে হচ্ছে নিবৃত্তি। আজই মন্দিরের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং খুলবে ২৬ তারিখ সকাল ছটায়।

চির সবুজ নীলাচল পাহাড় প্ৰকৃতির অকৃপণ দান। পাহাড়ের একপাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে মহাবাহু ব্ৰহ্মপুত্ৰ। আধ্যাত্মিকতার সেরা পীঠ হওয়ার পাশাপাশি নীলাচল পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য নজরকাড়া। অম্বুবাচি ঘিরে ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্ৰান্ত থেকে হাজার হাজার সাধু সন্ত ছুটে এসেছেন মায়ের টানে। পুজো পার্বণ,আধ্যাত্মিকতার জগতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। নীলাচলের হাতছানিতে হাজার পর্যটক এসেছেন মাতৃ আরাধনার পাশাপাশি কামাখ্যা,ভুবনেশ্বরী মন্দির লাগোয়া এলাকা থেকে গুয়াহাটিকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখা সবুজ পাহাড়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য চাক্ষুষ করতে।

তবে অম্বুবাচিতে আধ্যাত্মিকতাই মূল কথা। প্ৰতি বছরই কামাখ্যায় অম্বুবাচি মেলা হয়ে আসছে। ব্যতিক্ৰম নেই এবছরেও। সাধু-সন্তদের পাশাপাশি গৃহীরাও এসময়ে নীলাচলের বুকে ভিড় জমান। উদ্দেশ্যে একটাই,মায়ের দরজায় এসে শান্তির সন্ধান। মেলা উদ্যোক্তা কমিটির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে এবার কয়েক লক্ষ ভক্তের সমাগম হবে কামাখ্যা ধামে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে,জেলা প্ৰশাসন রাজ্য পুলিশ ও মেলা কমিটির সদস্যরা ভক্তদের নিরাপত্তার দিকটি দেখাশোনা করবে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়াল সম্প্ৰতি মন্দির প্ৰাঙ্গণে এক বৈঠকে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন,ভক্তদের থাকা খাওয়ায় যাতে কোনওরকম অসুবিধা না হয় সেদিকটির প্ৰতি লক্ষ্য রাখতে। ভক্তরা যে শিবিরগুলোতে থাকবেন সেগুলোতে পর্যাপ্ত পানীয় জল,টয়লেট ইত্যাদির ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে,আতিথেয়তার ক্ষেত্ৰে অসমের একটা সুনাম রয়েছে। সেই সুনামে যেন এতটুকু আঁচড় না লাগে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে জেলা প্ৰশাসন ও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন সোনোয়াল। ভক্ত ও পর্যটকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথাও আগেভাগেই বলে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী।

এই উদ্দেশ্যে মেলা পরিচালনা কমিটি ১২০ জন স্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী,৪০০ জন স্কাউট ও গাইডস,৪০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং ১৪০ জন অস্থায়ী নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েনের ব্যবস্থা করেছে।

মন্দির অভিমুখে যাওয়া রাস্তাগুলোর দুপাশে রেলিং বসানো হয়েছে। তিনটি পথ ধরে ভক্তরা মন্দির অবধি যাতায়াত করতে পারবেন।

মেলা চলাকালে যাতে কোনও ধরনের অপ্ৰীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয় তার জন্য ৩০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। মন্দির চত্বর ও আশপাশ এলাকা সাফ সুতরো রাখারও ব্যবস্থা নিয়েছে কমিটি। এছাড়া ২১০টি স্থায়ী ও ১০০টি অস্থায়ী সেনিটেশনের ব্যবস্থা হয়েছে। জুতো রাখার জন্য একটা বিশেষ স্থান ঠিক করা হয়েছে।

পুরো এলাকাটিকে তামাক মুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পাশাপাশি তামাক বিক্ৰি ও সেবন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনু্যায়ী ব্যবস্থা গ্ৰহণ করা হবে-জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। মন্দির চত্বর ও আশপাশ এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অম্বুবাচি মেলা ঘিরে নীলাচলের বুক এখন জন অরণ্যের চেহারা নিয়েছি। ভক্তরা ইতিমধ্যে এক চিলতে বসার জায়গা করে নিয়ে মায়ের নাম কীর্তনে বিভোর। জয় মা কামাখ্যা ধ্বনিতে এখন মুখরিত শক্তিপীঠের আকাশ।

‘অম্বুবাচি মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্ৰান্ত এবং বিদেশ থেকে ভক্তরা এখানে ছুটে এসেছেন মা কামাখ্যার আশীষ পেতে। মায়ের এই আশীর্বাদ তাঁদের মনে প্ৰাণে এমন শক্তি সঞ্চার করবে যা সারা বিশ্বে শান্তি ও সংহতির বাণী ছড়িয়ে দেওয়ার অবদান রাখতে তাঁদের ইন্ধন জোগাবে’। শুক্ৰবার গুয়াহাটির সোনারাম হাইস্কুলের মাঠে অম্বুবাচি মেলা ২০১৯-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়াল কথাগুলো বলেন। মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন,অম্বুবাচি মেলা দেশের বিভিন্ন প্ৰান্ত এবং বিদেশের ভক্ত ও পর্যটকদের এখানে আসার সু্যোগ করে দেয়। সোনোয়াল জানান,বৃহৎ পরিসরে এই মেলা আয়োজনের জন্য সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে আসা হচ্ছে।

গতবারের মতো এবারও অম্বুবাচি মেলা সর্বাঙ্গসুন্দর ও সার্থক করে তোলার জন্য সোনোয়াল গুয়াহাটিবাসীকে আয়োজকের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানান। মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন,এসময়ে রাজ্যে যাঁরা এসেছেন তাঁরা যাতে অসম সম্পর্কে একটা ইতিবাচক ধারণা নিয়ে ফিরে যেতে পারেন তার প্ৰতি লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব গুয়াহাটির প্ৰতিজন নাগরিকের।

কেন্দ্ৰীয় পর্যটন ও সংস্কৃতি দপ্তরের প্ৰতিমন্ত্ৰী(স্বতন্ত্ৰ দায়িত্বপ্ৰাপ্ত)প্ৰহ্লাদ সিং প্যাটেল বলেন,নতুন দায়িত্ব গ্ৰহণের পর প্ৰথম কর্মসূচি হিসেবে অম্বুবাচি মেলায় আসার সু্যোগ পেয়ে তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছেন। তিনি রাজ্যের পর্যাপ্ত প্ৰাকৃতিক সম্পদের সু্যোগ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন ব্যবস্থাকে আরও উন্নীত করার প্ৰয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

অসম পর্যটন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান জয়ন্ত মল্ল বরুয়া,কামাখ্যা দেবালয়ের বরদলৈ মোহিত শর্মা এবং আধ্যাত্মিক ধর্মগুরুরা অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেন। কামরূপ(মেট্ৰো)জেলাশাসক বিশ্বজিৎ পেগু স্বাগত ভাষণ দেন। রাজ্যের পর্যটন মন্ত্ৰী চন্দন ব্ৰহ্ম,শিক্ষামন্ত্ৰী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য,জলসম্পদ মন্ত্ৰী কেশব মহন্ত,খাদ্য প্ৰস্তুতকরণ দপ্তরের কেন্দ্ৰীয় প্ৰতিমন্ত্ৰী রামেশ্বর তেলি প্ৰমুখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com