হাতির গতিবিধি রুখতে গোলাঘাটের চা বাগানে জিরাফের মূর্তি বসানো হলো

হাতির গতিবিধি রুখতে গোলাঘাটের চা বাগানে জিরাফের মূর্তি বসানো হলো

নুমলিগড়ঃ গোলাঘাট জেলার দৈগ্ৰাং এলাকার কাছেপিঠে থাকা দোলাগুড়ি চা বাগান কর্তৃপক্ষ বুনো হাতির দৌরাত্ম্য থেকে তাদের চাষের জমি বাঁচাতে বাগানে পূর্ণাবয়ব জিরাফের তিনটি ডামি(মূর্তি)স্থাপন করেছেন। জিরাফগুলো তৈরি করা হয়েছে ফাইবার দিয়ে। গোলাঘাটের অধিকাংশ চা বাগান নামবর দৈগ্ৰাং অভয়ারণ্যের পরিধির মধ্যেই পড়ে। আপার দৈগ্ৰাং সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং লোয়ার দৈগ্ৰাং সংরক্ষিত বনাঞ্চলও এই এলাকার অন্তর্গত। নুমলিগড়-মোরঙির অধিকাংশ চা বাগান ওই রুটেই রয়েছে। হাতিরা ধান খেতে যাবার সময় সাধারণত এই পথই ব্যবহার করে থাকে।

দোলাগুড়ি চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন,বুনো হাতির পাল যে রুটটি ব্যবহার করে থাকে সেই পথের বিভিন্ন স্থানে পূর্ণাবয়ব জিরাফের তিনটি মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। নিকটবর্তী জঙ্গল এলাকা থেকে নেমে আসা হাতির পাল হামেশাই খেতের জমিতে হানা দেয়। চা বাগান কর্তৃপক্ষ আরও বলেছেন,পূর্ণাকৃতি জিরাফের মূর্তিগুলো আনা হয়েছে গুয়াহাটির গা ঘেঁষে থাকা সোনাপুর থেকে। প্ৰতিটি জিরাফের মূর্তি তৈরি বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে।

গোলাঘাটের একটি স্থানীয় এনজিও টাস্কার্স টাস্ক ফোর্সের সেক্ৰেটারি জেনারেল ঋতুরাজ ফুকন বলেন,জিরাফের পূর্ণাবয়ব মূর্তিগুলো বসানোর পর হাতির চলাচলে একটা পরিবর্তন দেখা গেছে। তিনি বলেন,বুধবার সকালে তাঁরা হাতির গতিবিধির প্ৰতি নজর রাখছিলেন। ওই সময় তারা দেখতে পেয়েছেন প্ৰায় ৫০-৬০টি হাতি ধান খেত থেকে ফিরছিল। ফেরার পথে হাতিগুলি জিরাফের মূর্তি দেখতে পেয়ে তাদের চলার পথ পাল্টে ফেলে। ‘জমির ফসল বাঁচাতে এই পন্থা গ্ৰহণ করাটা আপতত ভাল লক্ষণ বলে মনে করা হলেও এই ব্যবস্থা আখেরে কত দিন কার্যকর হবে সেটা আমরা বলতে পারছি না’-উল্লেখ করেন ফুকন।

‘হাতির চলাচলের পথে এটা একটা স্বপ্ন মেয়াদি মনস্তাত্ত্বিক বাধাস্বরূপ। কিন্তু হাতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান জন্তু। তাই হাতিরা কয়েকদিনের মধ্যে নকল জিরাফ বসানোর বিষয়টি ধরে ফেলতে পারবে’-বলেন গোলাঘাটের ডিভিশনাল বন আধিকারিক ভাস্কর ডেকা। তিনি বলেন,হাতি-মানুষের সংঘাত কিছুটা কমানো সম্ভব হতে পারে যদি চা বাগানগুলো ছোট ছোট বাগান সৃষ্টি করে এবং বাগান এলাকায় আর্দ্ৰজমি রাখে,যেখানে হাতিরা আশ্ৰয় নিতে পারে।

প্ৰকৃতি সংরক্ষণবিদ এবং গোলাঘাট জেলার প্ৰাক্তন ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন অরূপ বল্লভ গোস্বামী উল্লেখ করেন আফ্ৰিকার হাতিরা অনেক সময় জিরাফ দেখে ভয় পেয়ে থাকে। কারণ জিরাফ তার লম্বা গলা দিয়ে প্ৰতিপক্ষকে আঘাত হানে। কিন্তু হাতির সঙ্গে সরাসরি লড়াই হলে জিরাফের পাল্লা দেওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু এগুলো এশিয়ান এলিফ্যান্ট। এখানকার হাতি জিরাফ দেখেনি কখনও। তাই হাতির চলার পথে বিশালাকার জিরাফের মূর্তি বসালেও কাজ কতটুক সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। হাতি অত্যন্ত বুদ্ধিমান জীব। তাদের ঘ্ৰাণ শক্তি তীক্ষ্ণ। অন্য হাতির গায়ের গন্ধ সহজেই বুঝতে পারে তারা। দূর থেকে বাঘের গায়ের গন্ধও আঁচ করতে পারে। আর এই মূর্তি জিরাফের গায়ে কোনও গন্ধ নেই। তাই খুব শিগগিরই এগুলো যে নকল জিরাফ হাতিরা তা ধরে ফেলবে। প্ৰাণহীন মূর্তি জিরাফের পাশ ঘেঁষে দিব্যি আসা যাওয়া করবে হাতিরা। প্ৰাণীতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক তথা বন্য জীবন বিশেষজ্ঞ ডঃ রাজীব বসুমতারি কথাগুলো বলেন।

অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Know About | Vedic Philosophy in 21st Century

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com