অসমে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭,জল কমছে,স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফিরেনি

অসমে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭,জল কমছে,স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফিরেনি

গুয়াহাটিঃ রাজ্যে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার ডুবে আর দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে চলতি মরশুমের প্ৰলয় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭ জনে দাঁড়ালো। এর আগে ভূমিস্খলনে দুজন প্ৰাণ হারিয়েছিলেন। সোমবার বন্যা কবলিত ধেমাজি জেলা ও ধুবড়িতে জলে ডুবে দুজন মারা যান। এদিকে রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চলে বর্তমানে বন্যার জল অনেকটাই হ্ৰাস পেয়েছে। তবে বন্যা পীড়িত মানুষ এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। বন্যাদুর্গতদের অধিকাংশ এখনও তাদের ঘরে ফিরে যাননি। কারণ বন্যার তোড়ে অনেকেরই ঘরবাড়ির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। যোরহাটের নিমাতিঘাট এবং ধুবড়িতে ব্ৰহ্মপুত্ৰ এখনও বিপদ সঙ্কেতের ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। শোণিতপুর ,জেলার এনটি রোডে জিয়া ভরলি এখনও বিপদ চিহ্নের ওপর দিয়ে বইছে।

গতকাল অর্থাৎ সোমবার পর্যন্ত রাজ্যের ১৮টি জেলার ৫৯টি রাজস্ব সার্কলের ২২৮৩টি গ্ৰামের মোট ৩০,৫৫,৮৩৭ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্ৰস্ত এবং বন্যা কবলিত এই ১৮টি জেলা হচ্ছে ধেমাজি,বিশ্বনাথ,দরং,বরপেটা,নলবাড়ি,চিরাং,বরপেটা,নলবাড়ি,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,ধুবড়ি,দক্ষিণ শালমারা,গোয়ালপাড়া,কামরূপ,কামরূপ(মেট্ৰো),মরিগাঁও,নগাঁও,যোরহাট ও কাছাড়।

বর্তমানে রাজ্যের ধেমাজি,বিশ্বনাথ,দরং,বরপেটা,চিরাং,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,ধুবড়ি,গোয়ালপাড়া,কামরূপ,মরিগাঁও,নগাঁও,গোলাঘাট এবং যোরহাট জেলায় ৬৪৪টি ত্ৰাণ শিবির এখনও চলছে। এই সব ত্ৰাণ শিবিরে আশ্ৰিত রয়েছেন ৯৬,৮৯০ জন। দরং,বরপেটা,ধুবড়ি,কামরূপ,মরিগাঁও এবং গোলাঘাটে রয়েছে ১১৩টি ত্ৰাণ বণ্টন কেন্দ্ৰ।

অসম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ(এএসডিএমএ)বলেছে,ফসলি জমি সহ ১,১৪,১৭৯ হেক্টর কৃষি ভূমি বন্যায় ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। প্ৰায় ৯৭০০০ মানুষ মোট ৭৫৭টি ত্ৰাণ শিবিরে আশ্ৰিত রয়েছেন। জেলা প্ৰশাসনই এই সব ত্ৰাণ শিবির খুলেছে।

এদিকে বন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আইএএনএস বলেছে,চলতি প্ৰলয়ংকরী বন্যায় ১৫টি গন্ডার,একটি হাতি,১০০-এর বেশি হরিণ সহ মোট ১৮৭টি জীবজন্তুর মৃত্যু হয়েছে। চলতি মরশুমের বন্যায় কাজিরঙা রাষ্ট্ৰীয় উদ্যানের ৯০ শতাংশই ডুবে যায়। বন্যার করাল স্ৰোতের মুখে পড়ে দিশাহারা হয়ে পড়ে বন্যাপ্ৰাণীরা। কিছু বন্যাপ্ৰাণী উদ্যানের ভিতরে থাকা উঁচু স্থানে আশ্ৰয় নেয়। কিছু কিছু বন্যপ্ৰাণী আশ্ৰয়ের সন্ধানে ছুটে যায় কার্বি পাহাড় অভিমুখে। গত সপ্তাহে বন্যার জলে ডুবে যায় কাজিরঙা উদ্যানের চোরাশিকার বিরোধী শিবিরগুলিও।

উদ্যান কর্তৃপক্ষ বলেছেন,বন্যা পরিস্থিতির ঢিমেতালে উন্নতি হচ্ছে। ব্ৰহ্মপুত্ৰের জলপৃষ্ঠ ক্ৰমশ হ্ৰাস পেতে দেখা যাচ্ছে। সোমবার সকাল পর্যন্ত ব্ৰহ্মপুত্ৰের জলস্তর ১৬২ সেন্টিমিটার নিচে নেমেছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান,বন কর্মীরা গ্ৰাম বাসীদের সঙ্গে নিয়ে দুর্দশাগ্ৰস্ত বন্য প্ৰাণীদের পাহারায় রাত দিন খাটাখাটনি করে চলেছেন। বন্যার সময় উদ্যানের ১৬টি জীবজন্তুর মৃত্যু হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ১৫টি হরিণ এবং একটি সম্বর। ৩৭নং রাষ্ট্ৰীয় সড়কে দ্ৰুতবেগী গাড়ির ধাক্কায় মারা গেছে এই জীবজন্তুগুলো। ১৫টি গন্ডার এবং একটি হাতি বন্যার জলে ডুবে মারা গেছে। ১৩টি শুয়োর,১২টি সম্বর,৬টি হরিণ,দুটো মোষ এবং তিনটি সজারু ডুবে মারা গেছে-বলেন তিনি। স্থানীয় মানুষ ও বনকর্মীরা মিলে ১৫টি জীবকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com