গুয়াহাটিঃ ব্ৰহ্মপুত্ৰের অববাহিকা অঞ্চল চর-চাপরিতে বসবাসকারী লোকেরা ২০২১ সালের লোকগণনায় তাঁদের মাতৃভাষা কী লিখবেন সেটা প্ৰকৃতপক্ষে এখন একটা প্ৰশ্ন চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। চর চাপরি অঞ্চলে যারা বসবাস করছেন তারা রাজ্যের মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ। ২০১১ সালের জনগণনা কালে চর অঞ্চলের এই সব লোকেদের প্ৰায় ৫০ শতাংশ তাদের মাতৃভাষা বাংলা লিখিয়েছিলেন। বাকি ৫০ শতাংশ উল্লেখ করেছিলেন অসমিয়াই তাদের মাতৃভাষা। বর্তমানে চর-চাপরির এই সব মানুষ বিভিন্ন কারণে শঙ্কিত রয়েছেন। চরবাসীরা এখন কোন পক্ষ নেবেন বাংলা না অসমিয়া এনিয়ে রীতিমতো ধন্দে রয়েছেন।
অসম সাহিত্য সভা,চর-চাপরি সাহিত্য পরিষদ এবং চর অঞ্চলের অন্যান্য সংগঠনগুলি এই বিষয়টি সম্পর্কে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তাদের এই পদক্ষেপ আখেরে কতটুকু সফল হবে সে নিয়ে তারা যথেষ্ট সন্দিহান।
এই ইস্যু নিয়ে অসম সাহিত্যসভার সভাপতি পরমানন্দ রাজবংশী বলেন,‘আমরা চর-চাপরি অঞ্চলের চর-চাপরি সাহিত্য পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন ও সামাজিক সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন ২০২১-এর জনগণনায় অসমিয়াকেই মাতৃভাষা হিসেবে গ্ৰহণ করবেন। তবে,এই ইস্যু নিয়ে আমাদেরও অনেক কিছু করণীয় রয়েছে’।
ব্ৰহ্মপুত্ৰ অববাহিকায় প্ৰায় ২,২৫১টি চরচাপরি রয়েছে এবং এই চর অঞ্চলগুলো ৩,৬০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আছে। বন্যা ও ভাঙনের জন্য চর-চাপরির সংখ্যা কিছুটা পাল্টেছে। এই চর-চাপরি অঞ্চলগুলি বরপেটা,ধুবড়ি,মরিগাঁও,লখিমপুর,ধেমাজি,দরং ইত্যাদি জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। চর অঞ্চলের অধিকাংশ বাসিন্দা মুসলিম সম্প্ৰদায়ের এবং এরা তদানীন্তন পূর্ব বঙ্গ থেকে এখানে এসে ঘর বেঁধেছেন। এই সব লোকেদের অধিকাংশই নিজেদের ঘরে বাংলায়ই কথা বলে থাকেন। তবে সমস্ত লিখিত যোগাযোগ করেন অসমিয়া ভাষায়। রাজ্যে বর্তমানে চলা রাষ্ট্ৰীয় নাগরিক পঞ্জি(এনআরসি)সহ বিভিন্ন ইস্যু এখন এদের মাথায় খুরপাক খাচ্ছে। এনআরসি-র সম্পূর্ণ খসড়ায় নাম অন্তর্ভুক্তি নিয়ে সারা অসম ছাত্ৰ সংস্থার(আসু)উদ্যোগে যে আপত্তি তোলা হয়েছে তার অধিকাংশই চর-চাপরিতে বসবাসকারী লোকেদের বিরুদ্ধেই উত্থাপন করা হয়ছে। এরফলে চর অঞ্চলের লোকেরা হয়রানির মুখে পড়েছেন এবং নিরাপত্তাহীনতাও তাদের কুরে খাচ্ছে। মাঝখানে পশ্চিমবঙ্গের একটি অখ্যাত সংগঠন ‘চলো পাল্টাই’ অভিযান চালানোয় তা চরবাসীদের আলোড়িত করে। তবে শেষ পর্যন্ত ওই প্ৰচার চরবাসীদের বিশেষ সমর্থন কুড়োতে সফল হয়নি।
চর-চাপরি সাহিত্য পরিষদের সভাপতি হাফিজ আহমেদ সেন্টিনেলকে বলেন উগ্ৰ বাঙালি জাতীয়তা বোধকে আমরা কখনোই আমল দেইনি। আমরা কখনোই সেটা করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবো না। তবে এর পরও আমরা সামাজিক নিরাপত্তা পাচ্ছি না। একশো বছরের বেশি সময় ধরে আমরা চরে বসবাস করছি। কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তা না থাকায় আমরা আজও বৃহত্তর অসমিয়া সমাজের অঙ্গ হয়ে উঠতে পারিনি’-বলেন তিনি।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ অসমের মূল বাসিন্দার মর্যাদা দাবি ভূমিপুত্ৰ অসমিয়া মুসলিমদের