রাজ্যে চিকিৎসকের অপ্ৰতুলতায় ভুগছেন রোগীরা

রাজ্যে চিকিৎসকের অপ্ৰতুলতায় ভুগছেন রোগীরা

গুয়াহাটিঃ অসমের সরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এর পরিণতির প্ৰভাব পড়ছে রোগীদের ওপর। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট চাহিদার চেয়ে কম ৪৪ শতাংশ ডাক্তার ও স্বাস্থ্য আধিকারিক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার(হু)মতে,চিকিৎসক-রোগীর আনুপাতিক হার ১:১০০০ হওয়া উচিত। কিন্তু অসমের ক্ষেত্ৰে এই আনুপাতিক হার ১:১৮০০। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ফ্যাকাল্টি সদস্যের সংখ্যাও অনেক কম। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার(এমসিআই)শর্ত পূরণের ক্ষেত্ৰেও মেডিক্যাল কলেজগুলো অনেকটাই দূরে রয়েছে। এর ফলে রোগীর সঙ্গে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে ডাক্তারের সংঘর্ষ বাধা সহ বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। বর্তমানে রাজ্যের অসামরিক হাসপাতালগুলোতে ২,০৮৩ জন ডাক্তার ও স্বাস্থ্য আধিকারিক রয়েছেন। অথচ এক্ষেত্ৰে বর্তমানে মোট চাহিদা হচ্ছে ৪,৬৬৭ জন।

আসাম স্টেট মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের(এএসএমএ)সূত্ৰ মতে,রাজ্যে প্ৰায় ১০০ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক স্বেচ্ছামূলক অবসর নিতে চান। অনেক চিকিৎসককে আবার বেসরকারি হাসপাতালের দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়। বর্তমানে এটা একটা ট্যান্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে দেরিতে হলেও মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া(এমসিআই)রাজ্যের ছটি মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস পাঠক্ৰমে আসন সংখ্যা ১৭৪টি বৃদ্ধি করেছে। এই বৃদ্ধির ফলে এমবিবিএস পাঠক্ৰমে মোট আসন সংখ্যা ৯০০-তে দাঁড়ালো। কিন্তু তার পরেও রাজ্যে প্ৰতি বছর যে পরিমাণ ডাক্তার বেরিয়ে আসছেন তার সঙ্গে চাহিদার বিস্তর ফারাক এখনও থেকে গেছে। সূত্ৰটি বলেছে ২০২০-২১ সালে রাজ্যে ৭,১০০ জন চিকিৎসকের প্ৰয়োজন হবে। ২০২৩-২৪ সালে রাজ্যে বিশেষজ্ঞ সহ ৮,২০০ জন চিকিৎসকের প্ৰয়োজন দেখা দেবে।

১৯৪৭ সালে আসাম মেডিক্যাল কলেজ,১৯৬০-এ গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজ এবং ১৯৬৮ সালে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের পর দীর্ঘ প্ৰায় ৪০ বছর রাজ্যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়নি। ২০০৫-০৬ সালে যোরহাট,তেজপুর ও বরপেটায় আরও তিনটি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়। দীর্ঘদিন রাজ্যে কোনও মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন না করায় ডাক্তারের অপ্ৰতুলতা দেখা দেয়। ডিফু এবং লখিমপুরে আগামি বছর থেকে আরও দুটি মেডিক্যাল কলেজ চালু হবার কথা আছে। তবে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনই বড় কথা নয়। এক্ষেত্ৰে থাকা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথও খুঁজতে হবে। বিশেষ করে ডাক্তারদের থাকার জন্য আবাস ভবন,অন্যান্য মেডিক্যাল স্টাফেরও প্ৰয়োজন রয়েছে। রাজ্যের বহু জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীর যথেষ্ট অভাবও পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাছাড়া এই সব হাসপাতালের ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মীরা ডিউটিতে উপস্থিত থাকা সম্পর্কে রিপোর্ট করার সদিচ্ছা দেখান না। যার দরুন রোগীদেরই ভুগতে হয়।

এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকার এমবিবিএস উত্তীর্ণ ডাক্তারদের এক বছর গ্ৰামীণ এলাকায় চিকিৎসা সেবায় যুক্ত থাকাটা বাধ্যতামূলক করেছিল। কিন্তু এমবিবিএস উত্তীর্ণ ডাক্তারদের অনেকেই স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰি নিতে চাওয়ায় সরকারের এই ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়। তাই সরকার এখন অবসর প্ৰাপ্ত চিকিৎসকদের ঠিকার ভিত্তিতে নিয়োগ করে এই সমস্যা সমাধান করতে চাইছে। তবে রাজ্যে চিকিৎসক ও রোগীর অনুপাতে সেই বিশাল ফারাক রয়ে গেছে।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com