গুয়াহাটিঃ মহানগরী গুয়াহাটির নীলাচল পাহাড়ে এখন উৎসবের মেজাজ। এই পাহাড়ের বুকে রয়েছে দেবী তীর্থ কামাখ্যা। কামাখ্যা ধামের সেরা ধর্মীয় উৎসব অম্বুবাচি মেলা,যা শুরু হচ্ছে আগামি ২২ জুন। ২৫ জুন শেষ রাতে অম্বুবাচির নিবৃত্তি ঘটবে। প্ৰতি বছরই কামাখ্যায় অম্বুবাচি মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ব্যতিক্ৰম নেই এবারও। সারা দেশের বিভিন্ন প্ৰান্ত থেকে ভক্ত,সাধু সন্তদের ঢল নামে নীলাচল পাহাড়ে। ইতিমধ্যেই অনেক ভক্ত ও সাধু সন্ত এসে গেছেন কামাখ্যা ধামে।
আসন্ন অম্বুবাচি মেলার প্ৰতি লক্ষ্য রেখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়াল এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞের প্ৰস্তুতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার কামাখ্যায় এক বৈঠকে মিলিত হন। কামাখ্যার বার্ষিক এই সামাজিক ও আধ্যাত্মিক সম্মেলন সফলভাবে সমাপ্ত করা নিয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্ৰী চন্দন ব্ৰহ্মও। মেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে আগাগোড়া আলোচনা করেন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্ৰী মেলা সফল করে তুলতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগ ও জেলা প্ৰশাসনকে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্ৰহণ করার নির্দেশ দেন। সোনোয়াল বলেন,এসময়ে শক্তিপীঠে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হবে। কামাখ্যা ধামেই পর্যালোচনা বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। মেলা আয়োজনের জন্য বিভিন্ন বিভাগের গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে এদিনের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। মেলা আয়োজনের জন্য গ্ৰহণ করা বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে জেলাশাসকের কাছ থেকে জানতে চান মুখ্যমন্ত্ৰী।
‘কামাখ্যায় শিবির ব্যবস্থা,পানীয় জল,বিদ্যুৎ সরবরাহ,পরিবহণ ব্যবস্থা এবং ভক্তদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কেও অবগত হন মুখ্যমন্ত্ৰী। মেলা উপলক্ষে কামাখ্যায় এবছর প্ৰায় ২৫ লক্ষ ভক্ত আসছেন। তাই মেলা যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় তার জন্য প্ৰতিটি বিভাগকে অবিলম্বে প্ৰয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্ৰহণ করার নির্দেশ দেন সোনোয়াল।
মেলায় আসা বয়স্ক লোক,মহিলা ও শিশুদের যাতে কোনওরকম অসুবিধার মুখে পড়তে না হয় সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্ৰী। মেলা প্ৰাঙ্গণে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অব্যবস্থা যাতে না হয় তার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের প্ৰয়োজনীয় প্ৰশিক্ষণ দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
অম্বুবাচি মেলা চলাকালে মহানগরীর বিভিন্ন উদ্যান ও উড়াল সেতুগুলো আলোর মালায় সাজিয়ে তুলতেও পুর কর্তৃপক্শকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্ৰী।
তিনি আরও বলেন,কামাখ্যা পীঠ শুধু অসমই নয়,দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে একটা সামাজিক ও আধ্যাত্মিক পর্যটন স্থল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। ধর্মীয় পর্যটকরা গভীর আস্থা,বিশ্বাস ও ভালবাসা নিয়ে নীলাচল পাহাড়ে আসেন। তাই মেলায় আসা ক্ষণিকের অতিথিরা যাতে কোনও ধরনের অসুবিধায় না পড়েন তা সুনিশ্চিত করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্ৰী।
মুখ্যমন্ত্ৰী বলেন,আতিথেয়তায় অসমের বরাবর একটা নাম ডাক রয়েছে। তীর্থযাত্ৰী ও পর্যটকদের সাদরে বরণ করে নেওয়ার প্ৰথা অসমে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। পাঁচ দিনের এই ধর্মীয় যজ্ঞের মাধ্যমে অসমকে তার পরম্পরাগত ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। তাই তীর্থযাত্ৰীদের আপ্যায়নে কোনওরকম ত্ৰুটি যাতে না হয় সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলিকে পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্ৰী।
শহরের যেসব অস্থায়ী শিবিরে তীর্থযাত্ৰীদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলিতে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া মেলা চলাকালে কামাখ্যা মন্দিরে ২৪ ঘণ্টা পানীয় জল সরবরাহ করতে বলে দেন গুয়াহাটি পুর নিগমকে। তীর্থযাত্ৰী ও ভক্তরা যাতে সহজে নীলাচল পাহাড়ে যেতে পারেন তার জন্য অসম রাজ্য পরিবহণ নিগমকে ঘনঘন বাসের ব্যবস্থা করতেও বলেছেন তিনি। মন্দির চত্বরে তীর্থযাত্ৰীদের জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করতে বলেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগকে।
এই বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন অসম পর্যটন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান জয়ন্ত মল্ল বরুয়া,পর্যটন বিভাগের প্ৰিন্সিপাল সেক্ৰেটারি রাজেশ প্ৰসাদ,গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দীপক কুমার,কামরূপের(মেট্ৰো)জেলাশাসক বিশ্বজিৎ পেগু,দলৈ সমাজ এবং মেলার সঙ্গে জড়িত প্ৰতিটি বিভাগের বরিষ্ঠ কর্মকর্তারা।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ কামাখ্যা ধামে অম্বুবাচি মেলার প্ৰস্তুতি এখন তুঙ্গে