চন্দ্ৰযান-২ কে কক্ষপথে পৌঁছে দিল ইসরোর ‘বাহুবলী’

চন্দ্ৰযান-২ কে কক্ষপথে পৌঁছে দিল ইসরোর ‘বাহুবলী’
Published on

শ্ৰীহরিকোটা(অন্ধ্ৰপ্ৰদেশ): সমস্ত শঙ্কা কাটিয়ে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্ৰাভি্যান শুরু হলো। চন্দ্ৰযান ‘বাহুবলী’ জিএসএলভি রকেট সোমবার দুপুর ২.৪৩ মিনিটে সাফল্যের সঙ্গে পাড়ি জমালো চাঁদের পথে। শ্ৰীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্ৰ থেকে বাহুবলী মহাকাশযানটি চাঁদের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। চন্দ্ৰযান-২ এর সফল উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা সৃষ্টি করলেন এক নতুন ইতিহাসের। সারা বিশ্ব সাক্ষী রইলো ভারতের চন্দ্ৰযান ‘বাহুবলী’ উৎক্ষেপণের সফল দৃশ্যের। চন্দ্ৰযান-২ এর সফল উৎক্ষেপণে সারা দেশ উৎফুল্লিত। রাষ্ট্ৰপতি রামনাথ কোবিন্দ,প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্ৰপতি কোবিন্দ টুইটারে এক শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন,চন্দ্ৰযান-২ এর সফল উৎক্ষেপণ প্ৰতিজন ভারতীয়র কাছে এক গর্বের মুহূর্ত। তিনি মহাকাশ গবেষণায় এই সাফল্যের জন্য সংশ্লিষ্ট ভারতীয় বিজ্ঞানী এবং প্ৰযুক্তিবিদদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। রাষ্ট্ৰপতি কামনা করেন ইসরোর এই জয় যাত্ৰা অব্যাহত থাকুক। প্ৰধানমন্ত্ৰী তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন,‘ঐতিহাসিক এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী শক্তি এবং দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ইচ্ছা শক্তি প্ৰতিফলিত হলো বাহুবলীর সফল উৎক্ষেপণে’। মোদি আরও বলেছেন,গত সপ্তাহে উৎক্ষেপণের প্ৰাক্কালে চন্দ্ৰযান-২ কিছু কারিগরি ত্ৰুটি ধরা পড়ে। আমাদের বিজ্ঞানীরা নৈপুণ্যের সঙ্গে সেই ত্ৰুটি সারিয়ে নিজেদের দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। উৎক্ষেপণে এক সপ্তাহ দেরি হলেও চন্দ্ৰযান-২ পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাঁদে পৌঁছবে। চন্দ্ৰযান-২ এর সফল উৎক্ষেপণ দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের অনুপ্ৰাণিত করবে বলে প্ৰধানমন্ত্ৰী মনে করেন।

ইসরোর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে,উৎক্ষেপণের ১৬ মিনিটের মধ্যেই চন্দ্ৰযানটি পৃথিবীর নির্ধারিত কক্ষে পৌঁছে যায়। পৃথিবীর চারদিক ঘুরে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়বে চন্দ্ৰযান-২। আগামি ৭ জুলাই চাঁদের বুকে অবতরণ করবে চন্দ্ৰযানটি। চাঁদের উল্টো দিকে অর্থাৎ অন্ধকার দিকটিতে চন্দ্ৰযানটি অবতরণ করবে। পূর্ব সূচি অনু্যায়ী উৎক্ষেপণ থেকে অবতরণ পর্ব ৫৪ দিনের মধ্যে সারার সময় ধার্য হয়েছিল। কিন্তু পরে সময় কমিয়ে পুরো অভিযানের সময়সীমা ধার্য করা হয় ৪৮ দিন। চাঁদের দক্ষিণ মেরুই চন্দ্ৰযান-২ অভি্যানের লক্ষ্য। পৃথিবীর কোনও দেশ চাঁদের এই অন্ধকার মেরুতে অভি্যান চালায়নি। ভারতই প্ৰথম এই মেরুকে অভিযানের লক্ষ্য হিসেবে বেছে নিয়েছে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সূর্যের রশ্মি সরাসরি পড়ে না।

৬৪০ টন ওজনের রকেটটির ডাক নাম বাহুবলী। এটি ৪৩.৪ মিটার উঁচু। এই বাহুবলী রকেটটি ৬০৩ কোটি টাকায় নির্মিত। এটি ৩.৮ টন ওজনের চন্দ্ৰযান-২ মহাকাশ যানটি বহন করছে এবং এতে রয়েছে তিনটি অংশ। এই তিনটি অংশ হলো অরবিটার,যার ওজন ২,৩৭৯ কেজি,৮টি পেলোডস রয়েছে এতে। দ্য লেন্ড বিক্ৰমের ওজন ১৪৭১ কেজি এতে চারটি পেলোডস আছে এবং তৃতীয় অংশ রোভার বা প্ৰজ্ঞান,যার ওজন ২৭ কেজি,২টি পেলোডস থাকছে এতে।

অরবিটারটির নাম চন্দ্ৰযান-২। এই যানের যে অংশটি চাঁদের মাটি স্পর্শ করবে সেই অংশের নাম ‘বিক্ৰম’। চাঁদের মাটি পরীক্ষার জন্য মূল যানে যে গাড়ি বা রোভারটি জোড়া হয়েছে তার নাম প্ৰজ্ঞান। চন্দ্ৰপৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার এক কক্ষে এটি আবর্তন করবে এবং টানা ১ বছর চাঁদের মাটির বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্ৰহ করবে রোভার বা প্ৰজ্ঞান। চন্দ্ৰযান-২ চাঁদের বুকে জল ও খনিজ পদার্থেরও সন্ধান করবে।

ইসরোর প্ৰধান কে শিবন বলেন,এটা ভারতের কাছে একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। চন্দ্ৰযান-২ উৎক্ষেপণের পর তিনি বলেছেন,গত ১৫ জুলাই চন্দ্ৰযানে ত্ৰুটি ধরা পড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমাদের বিজ্ঞানীরা তা সারিয়ে তোলেন। তিনি বলেন,বিক্ৰম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পা রাখবে। চাঁদের এই মেরুতে কেউ এপর্যন্ত অভিযান চালায়নি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই গোটা বিশ্ব এখন আমাদের এই অভিযানের দিকে তাকিয়ে আছে। শিবন বলেন,চন্দ্ৰযানটি উৎক্ষেপণের জন্য জিএসএলভি মার্ক-থ্ৰি রকেটের ক্ষমতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। প্ৰথম চন্দ্ৰ অভিযানে সংগৃহীত তথ্য নিয়েও পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাবে চন্দ্ৰযান-২। উল্লেখ্য,রাশিয়া,আমেরিকা ও চিনের পর চন্দ্ৰ অভিযানে চতুর্থ দেশের তালিকায় নাম লেখাতে চলেছে ভারত।

logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com