গুয়াহাটিঃ হিন্দুস্তান কাগজ কলের(এইচপিসি)কর্মীরা চান,সরকার নগাঁও ও কাছাড়ে থাকা রুগণ কল দুটি হয় বন্ধ অথবা পুনরুজ্জীবিত করুক। সরকার এই দুই কাগজ কল ও কর্মীদের ভবিষ্যৎ এভাবে দিনের পদ দিন ঝুলিয়ে রাখুক তার সম্পূর্ণ বিরোধী কর্মীরা। দুটো কাগজ কলের কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের স্পষ্ট অভিমত হলো,এর একটা হেস্তনেস্ত হোক। কল দুটো বন্ধ থাকায় প্ৰায়ই কর্মীর মৃত্যু হচ্ছে,কেউ আবার আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। আর এরজন্য দোষের বোঝা গিয়ে পড়ছে সরকারের ওপর। কল দুটোর কর্মীরা গত ২৭ মাস ধরে বেতন পর্যন্ত পাচ্ছেন না। অধিকাংশ কর্মী ও তাদের পরিবার পরিজনকে অনাহার,অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ পর্যন্ত চালাতে পারছেন না কর্মীরা। যারা ছেলে-মেয়েকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরের বড় শহরগুলিতে পাঠিয়েছিলেন,অর্থাভাবের জন্য পড়াশোনা মাঝপথে শিকোয় তুলে তাদের ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়েছেন কর্মীরা। কলের কর্মীরা ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্ৰচণ্ড দুঃচিন্তাগ্ৰস্ত। নগাঁও কাগজ কলের কর্মী বিশ্বজিৎ দাস(৫৫)গত শনিবার আত্মহত্যা করেছেন। কাগজ কল দুটোর বিভিন্ন কর্মী সংস্থা বলেছে,চরম অর্থাভাবের মুখে পড়েই বিশ্বজিৎ দাস আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।তাই কর্মী সংস্থাগুলি এখন এটা স্পষ্ট করে জানতে চায় সরকার কল দুটো পুনরুজীবিত করবে কি না। এভাবে আশ্বাসের ওপর ভরসা করে আর ঝুলে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে তাঁদের কাছে।
২০১৬ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। রাজ্যের উদ্যোগ মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি নগাঁও ও কাছাড়ের পাঁচগ্ৰাম কাগজ কলের কর্মীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন রাজ্য সরকার এক বছরের মধ্যে রুগণ মিল দুটো পুনরুজ্জীবিত করবে। দিশপুরের জোট সরকার তিন বছর পূরণ করতে চললো,কিন্তু আজ অবধি কল দুটো খোলা নিয়ে কোনও তৎপরতা গ্ৰহণ করতে দেখা গেলো না তাদের।।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে,কল দুটো খোলার ব্যাপারে তারা কেন্দ্ৰের কাছে প্যাকেজ প্ৰস্তাব রেখেছে। ওদিকে কেন্দ্ৰীয় সরকারও ঘোষণা দিয়েছিল দুটো কাগজ কলের কর্মীদের বকেয়া বেতনের টাকা তারা রিলিজ ’করবে। কিন্তু কেন্দ্ৰের ওই ঘোষণা আজও বাস্তবায়িত হলো না।
এইচপিসি পেপার মিল রিভাইবল অ্যাকশন কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক মানবেন্দ্ৰ চক্ৰবর্তী দ্য সেন্টিনেলকে বলেন,এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে কোনও রকম আগাম নোটিশ ইস্যু না করেই দুটো কাগজ কল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুটো বছর ইতিমধ্যেই কেটে গেছে। ‘তাই সরকারকে এখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া উচিত। কল দুটো হয় পুনরুজ্জীবিত করা হোক নতুবা চিরকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হোক। কর্মীদের আর ঝুলিয়ে রাখা উচিত নয়। মরার আগে আমরা বারবার মরতে চাই না’-বলেন তিনি।
চক্ৰবর্তী আরও বলেন,মুখ্যমন্ত্ৰী সর্বানন্দ সোনোয়ালের সঙ্গে আমরা কয়েক দফা আলোচনা করেছি। তিনি আমাদের আশ্বাসও দিয়েছেন কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। গত ২৭ মাসে কল দুটোর অনেক কর্মী ঋণগ্ৰস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কলের কর্মীদের ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেন্দ্ৰ দেশের বিভিন্ন স্থানে রুগণ শিল্প পুনরুজ্জীবিত করতে দেদার টাকা ঢালছে,কিন্তু অসমকে দিচ্ছে না। এই সরকারকে আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই হয় আমাদের মেরে ফেলুন,নতুবা বাঁচতে দিন। ‘আমরা আর এভাবে সুতোয় ঝুলে থাকতে পারছি না’-বলেন তিনি।