গুয়াহাটিঃ শরতের স্নিগ্ধ পরশে দেখতে দেখতে এসে গেলো দুর্গাপুজো। অসমের প্ৰতিটি প্ৰান্ত এখন উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা। আজ সন্ধ্যায় ষষ্ঠী,মায়ের বোধন। বেদমন্ত্ৰ উচ্চারণে মৃন্ময়ী প্ৰতিমায় প্ৰাণ প্ৰতিষ্ঠার পর চিন্ময়ী রূপ নেবেন মা। ঢাক-কাসরের শব্দে প্ৰাণবন্ত হয়ে উঠবে প্ৰতিটি পুজো মণ্ডপ। মহানগরী এবং গোটা রাজ্যের বিভিন্ন পুজো কমিটি রাত দিন এক করে মণ্ডপগুলো সাজিয়ে তুলেছেন। বাহারি আলোর বর্ণচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে মণ্ডপগুলো। থিম এবং সাবেকিয়ানা মিলে মিশে যেন একাকার। ভক্তরা আজ সন্ধ্যায় বেদীতে প্ৰতিষ্ঠা করবেন মায়ের মূর্তি। এরপরই হবে বোধন। তবে মহানগরীর বিভিন্ন বারোয়ারি পুজো মণ্ডপে মায়ের মূর্তি প্ৰতিষ্ঠা করা হয়েছে পঞ্চমীতে। গুয়াহাটির কালাপাহাড়,কাহিলিপাড়া,ভাস্করনগর,লালগণেশ ইত্যাদি অঞ্চলের অধিকাংশ মণ্ডপে পঞ্চমীর রাতেই দেবী প্ৰতিমা বেদীতে প্ৰতিষ্ঠা করা হয়। কচিকাচাদের দাপাদাপিতে মণ্ডপ প্ৰাঙ্গণ প্ৰাণবন্ত হয়ে ওঠে। এবার ধরাধামে মায়ের আগমন ঘোটকে,ফিরবেন সেই ঘোড়ায় চেপে।
কুমোরটুলিগুলোতে ব্যস্ততা এখন চরমে। মৃৎশিল্পীদের একটুকুও ফুরসত নেই। কারণ ষষ্ঠীর সন্ধে নামার আগেই বায়নার মূর্তিগুলো বিভিন্ন পুজো কমিটির হাতে সঁপে দিতে হবে তাঁদের। মাঝে কদিন প্ৰতিকূল আবহাওয়ার জন্য মৃৎশিল্পীদের যথেষ্ট ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে আকাশ পরিচ্ছন্ন হওয়ায় সেই ঝক্কি তাঁরা কাটিয়ে উঠেছেন।
হাট বাজার,শপিং মলগুলোতে এখন বেদম ভিড়। সাধ্যমতো পুজোর কেনাকাটায় ব্যস্ত মানুষ। মহানগরীর পথে পথে যানজট। পুজো বলে কথা। ব্যস্ত পথে গন্তব্যে পৌঁছনোর তাড়া তো রয়েইছে।
আজ বিল্ব বোধনের পরই বহু কাঙ্খিত মায়ের পুজো শুরু হচ্ছে। শনিবার সপ্তমী পুজো,রবিবার মহা অষ্টমী এবং সোমবার মহানবমী। এই তিনদিন মায়ের পুজো হবে ঘটা করে,সাত্ত্বিক বিধানে। মঙ্গলবার দশমী পুজো শেষে মায়ের বিদায় বেলা। বিদায় লগ্নে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে এয়ো স্ত্ৰীরা একে অপরকে রাঙাবেন সিঁন্দুরে। নিরঞ্জন শেষে হবে বিজয়া। আবার একটা বছরের প্ৰতীক্ষা।
এবার মহানগরীর বিভিন্ন পুজো কমিটি বিভিন্ন থিম নিয়ে তাদের মণ্ডপ সাজিয়েছে। থিম পুজোর পাশাপাশি সাবেকি পুজোরও খামতি নেই। মহানগরীর বিষ্ণুপুর পুজো কমিটি এবার অযোধ্যার রামমন্দিরের আদলে গড়েছে তাদের মণ্ডপ। শান্তিপুর শ্ল্যুইচ গেট বানিয়েছে বর্ণাঢ্য প্ৰাসাদ। মহানগরীর কাহিলিপাড়া স্থিত ভৈরবতলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি এবারও চমক দেখিয়েছে তাদের মণ্ডপ সজ্জায়। জয়পুরের হাওয়া মহলের আদলে মণ্ডপ গড়েছে তারা। রাজস্থানের পরিচয় জনসমক্ষে তুলে ধরতেই এই অনবদ্য প্ৰয়াস। মণ্ডপ নির্মাণের মুখ্য শিল্পী এসএন শেট। মণ্ডপ সজ্জা করেছেন সত্যজিৎ মণ্ডল। মূর্তি গড়েছেন গুয়াহাটির মৃৎশিল্পী রামু পাল। এই মণ্ডপের আলোকসজ্জা করেছেন কলকাতার শিল্পী। মণ্ডপে বসানো হয়েছে ১০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। বেলতলা লক্ষ্মীমন্দিরের পুজোর থিম এবার-পরিবেশ। ওদিকে পাণ্ডু,মালিগাঁওও সেজেছে পুজোর সাজে।
মালিগাঁও কালিবাড়ি রেস্টক্যাম্পের পুজোও বৈচিত্ৰ্যের দাবি রাখে। কুমারপাড়া পাঁচআলি,আটগাঁও-এর বীণাপাণি ক্লাব,টকোবাড়ির পুজো ফি-বছর পুজোয় বৈশিষ্ট্যের ছাপ রেখে এসেছে। নারেঙ্গি কালীবাড়ির দুর্গাপুজোয় ভক্তির প্ৰাবল্য মন ভরিয়ে দেয়।
আজ ষষ্ঠীর লগ্নে গুয়াহাটির আকাশে মেঘ রোদের লুকোচুরি খেলা চলছে। কখনো রোদ উঠছে,আবার কখনও বা আকাশের মুখ ভারি। বৃষ্টি না হলে পুজোর তিনদিনই মহানগরীতে মানুষের ঢল নামবে-তা হলফ করেই বলা যায়। সব ঠিকঠাক চললে শহর গুয়াহাটি হবে প্ৰাণোচ্ছল। পুজো ঘিরে মহানগরী হবে ভালবাসা,মহামিলনের তীর্থ।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ কোকরাঝাড়ে সেনার স্বচ্ছতা অভিযান
অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Durga Puja 2019: Kahilipara Sarbajanin Durga Puja