ফের লোকসভায় পাস হলো তিন তালাক বিল

ফের লোকসভায় পাস হলো তিন তালাক বিল

নয়াদিল্লিঃ মুসলিমদের মধ্যে তিন তালাক প্ৰথার অবসান এবং দোষী স্বামীদের ৩ বছর পর্যন্ত সাজা দেওয়ার লক্ষ্যে মুসলিম মহিলা(বিবাহের অধিকার সুরক্ষা)বিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার লোকসভায় পাস হয়ে গেলো। বিরোধীদের জোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ফের লোকসভায় পাস হলো তিন তালাক বিলটি। উল্লেখ্য,এর আগেও এই বিলটি দুদুবার রাজ্যসভায় আটকে গিয়েছিল। বিরোধীরা বিতর্কিত বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানানো সত্ত্বেও বিতর্কিত বিলটি লোকসভায় পাস হলেও রাজ্যসভায় আরও একবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে আঁচ করা হচ্ছে।

মুসলিম(মহিলা বিবাহ সুরক্ষা)বিল ২০১৯-এ তাদের স্বামীদের একই সঙ্গে তিন তালাক উচ্চারণ করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটানোর প্ৰথা রদ করতে চাওয়া হয়েছে। সংসদের নিম্নকক্ষে এদিন এই বিলটি উত্থাপন করেন কেন্দ্ৰীয় আইনমন্ত্ৰী রবিশঙ্কর প্ৰসাদ। বিল নিয়ে বিতর্কের জবাব দিতে গিয়ে প্ৰসাদ বলেন,বিলটিকে আইনি রূপ দেওয়ার সঙ্গে রাজনীতি অথবা ধর্ম জড়িত নয়। ‘এটা মহিলাদের মর্যাদার বিষয়’। সমাজে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা ও ন্যায় প্ৰতিষ্ঠায় তিন তালাক বিলটি অত্যন্ত প্ৰয়োজন।

প্ৰসাদ আরও বলেন,মুসলিম মহিলাদের একাংশ তাঁর কাছে এসে বলেছেন,বিলটি আইনে পরিণত হলে তারা ইদ এবং স্বাধীনতা দিবস পালন করতে পারবেন। হিন্দুদের মধ্যেও একসময়ে সতীদাহ ও পণ প্ৰথা ইত্যাদি ছিল। কিন্তু সেগুলোর আজ অবলুপ্তি ঘটেছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্ৰহণ করায়। তিনি বলেন,তিন তালাক বিলটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্ৰণোদিত নয়। দেশে লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচাতেই এই বিল আনা হয়েছে। এতে মুসলিম মহিলাদের অধিকার সুরক্ষিত হবে। গত জুন মাসে তিন তালাক বিলটি সংশোধিত আকারে সংসদে পেশ করা হয়। বিলে উল্লেখ করা হয়েছিল,যখন তখন তিন তালাক উচ্চারণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং এই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট স্বামীর তিন বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। আর এনিয়েই যত আপত্তি বিরোধীদের। বিরোধীদের মতে,এই সাজার ক্ষেত্ৰে শর্ত রাখা হলে আইনটির অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে প্ৰসাদ সরকারের হয়ে বিরোধীদের এই আশ্বাস দিয়েছেন যে,তিন তালাক আইনের অপব্যবহার ঠেকাতে এতে কিছু সংশোধন ঘটানো হয়েছে। বিলে যে সংশোধনী প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে,অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিনের আবেদন করতে পারবেন। তিনি বলেন,বিলটি জামিন অযোগ্য হলেও অভিযুক্ত ম্যাজিস্ট্ৰেটের কাছে জামিনের আবেদন দাখিল করার সু্যোগ পাবেন। পুলিশ জামিন দিতে পারবেন না। একমাত্ৰ ম্যাজিস্ট্ৰেট দিতে পারবেন জামিন। স্ত্ৰীর বক্তব্য শোনার পরই জামিন পেতে পারেন স্বামী। লিঙ্গ বৈষম্য ঘোচাতে এই বিল অত্যন্ত জরুরি-উল্লেখ করেন আইনমন্ত্ৰী। ২০১৭ সালে সুপ্ৰিম কোর্ট দেশে এই তিন তালাক প্ৰথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু তার পরেও দেশে একের পর এক তালাকের ঘটনা ঘটে চলেছে। তিন তালাক প্ৰথা মহিলাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। প্ৰসাদ বলেন,সর্বোচ্চ আদালত উল্লেখ করেছিল পাকিস্তান,আফগানিস্তান,মালেয়েশিয়া,ইন্দোনেশিয়া,জর্ডন,ইজিপ্ট এবং তুনিশিয়া সহ ২০টি ইসলামিক দেশ তিন তালাক বেআইনি ঘোষণা করেছে। এই দেশগুলো এটা করতে পারলে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্ৰ হয়েও কেন তা পারবে না-জানতে চান তিনি।

সুপ্ৰিমকোর্ট বলেছিল,তিন তালাক স্বেচ্ছাচারী এবং অসাংবিধানিক এবং সেইসঙ্গে এব্যাপারে সংসদে আইন আমার নির্দেশ দিয়েছিল। ‘আমরা যখনই এই ইস্যু নিয়ে আইন আনার চেষ্টা করছি তখনই বিরোধীরা বাগড়া দিচ্ছে’। এই পরিস্থিতিতে আমাদের মুসলিম বোনেদের কি করা উচিত? তাঁদের এভাবে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দেওয়া কি উচিত’-প্ৰশ্ন তোলেন প্ৰসাদ।

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com