আর্থিক মন্দাবস্থার আবহেই বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্ৰী নির্মলা সীতারামন

আর্থিক মন্দাবস্থার আবহেই বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্ৰী নির্মলা সীতারামন

আর্থিক মন্দাবস্থার মধ্যেই কেন্দ্ৰীয় অর্থমন্ত্ৰী নির্মলা সীতারামন শনিবার সংসদে পেশ করলেন ২০২০-২১ সালের বাজেট। এবছর বাজেট পেশের আগে সীতারামন প্ৰয়াত প্ৰাক্তন অর্থমন্ত্ৰী অরুণ জেটলিকে স্মরণ করেন। মোদি সরকার দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর এটা এই সরকারের দ্বিতীয় বাজেট। দেশের একাংশে বিদ্ৰোহ,বিক্ষোভ এবং আর্থিক মন্দাবস্থার মধ্যে এবারের এই বাজেট সীতারামনের কাছে এক বড় চ্যালেঞ্জ। বাজেটের শুরুতেই দেশের কৃষকদের আয় ২০২২-এর মধ্যে দ্বিগুণ করাই মোদি সরকারের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করছেন সীতারামন। কৃষক এবং কৃষির উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ১৬ পয়েন্টের অ্যাকশন প্ল্যাস তৈরির বিশেষ নজর দেওয়া হবে এবং কৃষির বাজারকে আরও বেশি প্ৰতিযোগিতামূলক করার কথাও বাজেট কক্তৃতায় বলেছেন তিনি। প্ৰধানমন্ত্ৰীর ফসল বিমা যোজনার আওতায় ৬.৬১ কোটি কৃষক রয়েছেন।

অর্থমন্ত্ৰী বলেন,কৃষিখাতে ব্যাপক বিনিয়োগ জরুরি। জলের সমস্যা থাকা ১০০টি জেলায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্ৰহণের প্ৰস্তাব রেখেছেন তিনি। সোলার পাম্প সেটের জন্য দেশের ২০ লক্ষ কৃষককে আর্থিক সাহায্যের প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। কিষান ক্ৰেডিট কার্ড ছাড়াও কিষান রেল প্ৰকল্প চালু করার প্ৰস্তাব রেখেছেন তিনি। কৃষি পণ্য বহনের সুবিধার্থে ভারতীয় রেলের সঙ্গে পিপিপি মডেলে ট্ৰেন চলবে। বিমানে কৃষিপণ্য উড়ানেরও প্ৰস্তাব রেখেছেন অর্থমন্ত্ৰী। কৃষকদের গ্ৰামীণ স্টোরেজের আওতায় আনারও প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে।

নির্মলা দেবী জানান,তিনটি কেন্দ্ৰীয় ভাবনার ওপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে এই বাজেট। জীবনধারণের মান উন্নত করতে উচ্চাভিলাষী ভারত,আর্থিক বিকাশ,সবার আর্থিক উন্নতি ও যত্নশীল সমাজ এই তিনটি ধারণাই বাজেটের প্ৰতিপাদ্য বিষয় বলে উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্ৰী।

তিনি জানান,২ লক্ষ কৃষককে পাম্প সেট দেওয়া হবে। তাছাড়া সারা দেশে পুরনো বিদ্যুতের মিটার বাতিল করা হবে। এর বদলে প্ৰিপেইড মিটার চালু করার প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ পেতে হলে আগে টাকা দিতে হবে। বাজেটে শিক্ষাখাতে ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। দেশে ১০০টি বিমানবন্দর তৈরিরও প্ৰস্তাব রেখেছেন তিনি। স্বচ্ছ ভারত যোজনা বাবদ ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। প্ৰধানমন্ত্ৰী জল জীবন মিশন বাবদ ৩.৬ কোটি এবং প্ৰধানমন্ত্ৰী জন আরোগ্য যোজনা খাতে ধার্য করা হয়েছে ৬৯ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে শর্তসাপেক্ষে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। পাঁচ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্ৰে কর দিতে হবে না। ৫ থেকে সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা আয়ের ক্ষেত্ৰে ১০ শতাংশ কর দিতে হবে। সাড়ে ৭ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্ৰে কর দিতে হবে ২০ শতাংশ। তবে অর্থমন্ত্ৰী জানিয়েছেন পুরনো হারে আয়কর দিলে ছাড় পাওয়া যাবে না।

বাজেট ভাষণে জিএসটির কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে সীতারামনের দাবি,জিএসটির ফলে গ্ৰাহকদের বছরে ১ লক্ষ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। এতে পরিবহণ ও লজিস্টিকস সেক্টরের কার্যক্ষমতার মান বেড়েছে। সুবিধা হয়েছে ক্ষুদ্ৰ ও মাঝারি শিল্পের। ২০২০-র এপ্ৰিল থেকে জিএসটি রিটার্ন সহজ করা হবে বলে তিনি জানান। জিএসটি সংগ্ৰহের পরিমাণ বার্ষিক হিসেবে ৮.১২ শতাংশ থেকে জানুয়ারি ২০২০-তে বেড়ে ১,১০,৮২৮ কোটি টাকা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মেডিক্যাল যন্ত্ৰপাতির উপর স্বাস্থ্য সেস-এর প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। জিএসটিতে আরও সংস্কার আনা হবে এবং এর আওতায় আয়কর জমা দেওয়া সহজ হবে। করদাতারা আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে যাতে আধার ও প্যান পান তার জন্য একটা নতুন প্ৰক্ৰিয়া চালু করা হবে।

আগামি অর্থ বছরে ২২ লক্ষ ৪৬ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য মাত্ৰা রাখা হয়েছে বাজেটে। আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্ৰা ধরা হয়েছে ১০ শতাংশ। এলআইসি-র অংশীদারিত্ব বিক্ৰির প্ৰস্তাব রেখেছে সরকার। আইডিবিআই ব্যাংকেও নিজেদের শেয়ার বিক্ৰি করবে সরকার। ব্যাংকগুলিকে চাঙ্গা করতে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। ব্যাংক গ্যারান্টি ১ লক্ষ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকায় বৃদ্ধি করা হবে। ব্যাংক বন্ধ হলে ৫ লক্ষ টাকা বিমার সুবিধা রাখা হয়েছে। গ্ৰাহকরা বিমা হিসেবে সেই টাকা পাবেন।

জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য ৩০ হাজার ৭৭০ কোটি এবং লদাখের উন্নয়নে ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। অসম,তামিলনাডু,গুজরাত,হরিয়ানা,উত্তর প্ৰদেশে প্ৰত্নতাত্ত্বিক সংগ্ৰহশালা গড়ার প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। মহিলাদের উন্নয়নে ২৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।

পরিবহণ কাঠামোয় ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের প্ৰস্তাব রাখা হয়েছে। ২০২৫-এর মধ্যে যক্ষ্মা রোগ নির্মূলেরও প্ৰস্তার রেখেছেন নির্মলা। সাগরমিত্ৰ নামে একটি প্ৰকল্পের মাধ্যমে মাছ চাষে গ্ৰামের যুবকদের নিযুক্ত করা হবে। উত্তর-পূর্বে চালু হবে কিষান রেল। দেশের ২৭ কোটি মানুষকে দারিদ্ৰ্য সীমার ওপরে আনা হয়েছে বলে দাবি করলেন নির্মলা। গরিবের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছতে ব্যবস্থা নিয়েছে কেন্দ্ৰ। রেলের জন্য বড়সড় লগ্নির কথা বলেছেন অর্থমন্ত্ৰী। রেলের খালি জায়গায় নির্মাণ করা হবে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ। পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানগুলিতে তেজজের মতো সুপারস্পিড ট্ৰেন চালু করার প্ৰস্তাব রেখেছেন তিনি।

বাজেটে যে সমস্ত সামগ্ৰীর দাম বাড়ছে সেগুলির তালিকায় রয়েছে সিগারেট,তামাকজাত সামগ্ৰী,পোর্সেলিন বা চিনামাটির বাসনপত্ৰ,ক্লে আয়রন,ইস্পাত,তামা,বাণিজ্যিক গাড়ির যন্ত্ৰাংশ,ক্যাটলিটিক কনভার্টার।

দাম কমছে নিউজপ্ৰিন্ট,চিনি,কৃষিক্ষেত্ৰে ব্যবহৃত পশুদের থেকে পাওয়া পণ্য,টুনা মাছের চারা,হালকা কোটেড কাগজ,সর তোলা দুধ,সয়া ফাইবার,মদ্য জাতীয় কিছু পানীয়,সয়া প্ৰোটিন ইত্যাদি।

অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Meet Australian Researcher Stephen Moore who’s researching on indigenous languages of NE

Related Stories

No stories found.
logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com