দিশপুর ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সরকারি কার্যালয়ে কর্মসংস্কৃতি আজ তলানিতে!

দিশপুর ২৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করলেও সরকারি কার্যালয়ে কর্মসংস্কৃতি আজ তলানিতে!
Published on

গুয়াহাটিঃ দিশপুর সরকারি কর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ ঢালছে ঠিকই কিন্তু প্ৰত্যাশানু্যায়ী কর্মসংস্কৃতির তেমন নজির দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না সরকারি কার্যালয়গুলোতে। পাঁচ লক্ষেরও বেশি সরকারি কর্মীর বোঝা রয়েছে দিশপুরের কাঁধে। সারা বছরে দিশপুর যে রাজস্ব আয় করে থাকে তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ সরকারি কর্মীদের বেতন মেটাতেই ব্যয় হয়। সরকারি কার্যালয়গুলোর অধিকাংশতেই কর্মসংস্কৃতির অভাব থাকার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আর এটাই কার্যালয়গুলোর বাস্তব দৃশ্য। সকালের দিকে অনেক বেলা পর্যন্ত বহু কার্যালয়ের আসনগুলো ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ফাইলের গাদা জমা হয়ে সেগুলোতে দেখা যায় ধুলোর আস্তরণ। তাছাড়া সূর্যাস্তের অনেক আগেই কর্মীদের বাড়িতে ফেরার তাগিদ শুরু হয়ে যায়। কর্ম সংস্কৃতি নিয়ে মাথা ঘামানোর অবকাশ যেন অধিকাংশেরই নেই। সরকারি কার্যালয়ের এই দৃশ্য নিত্য দিনের। অসম সরকার বিভিন্ন সূত্ৰ থেকে বছরে ২৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্ৰহ করে। অথচ কর্মচারীদের বেতন,পেনশন ও অন্যান্য পারিশ্ৰমিক বাবদ সরকারের ব্যয় হয় ২৭ হাজার কোটি টাকা। পরিস্থিতি এমন একটা স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে যে কর্মচারীদের বেতন দিতে রাজ্যকে কেন্দ্ৰীয় সরকারের রিলিজ করা তহবিলের ওপর নির্ভর করতে হয়।

সূত্ৰটি বলেছে,অর্থ কমিশন প্ৰতি পাঁচ বছর অন্তর ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা রিলিজ করে থাকে। রাজস্ব আয় এবং খরচের(বেতন,পেনশন ও অন্যান্য পারিশ্ৰমিক)মধ্যে থাকা ফারাক পূরণের কাজে ব্যবহারের জন্য।

সরকারি কোষগার বলতে গেলে কর্মচারীদের বেতন মেটাতেই ফাঁকা হয়ে যায়। তাই ‘জন সেবা’ শব্দটি নিয়ে অধিকাংশ সরকারি কর্মীকে মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। ওই সমস্ত কর্মীরা কর্মসংস্কৃতির ধারে কাছে না ঘেঁষে এটাকে এলিয়েন সংস্কৃতি হিসেবে বিবেচনা করে। অফিসে আসা যাওয়াটা তাদের কাছে নিছকই একটা কৌতুক হয়ে পড়েছে।

২০১৬ সালে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অফিসের সময় পাল্টে সকাল ৯.৩০ থেকে বিকেল ৫টা করেছিল কর্মসংস্কৃতির উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে। সাড়ে নটার কথা তো ভুলে যাওয়াই ভালো। ৬০ শতাংশ সরকারি কর্মী অফিসে পা রাখেন বেলা ১১টা থেকে ১১.৩০ মিনিটে। রাজ্য সচিবালয়েও এই দৃশ্য হামেশাই দেখা যায়। জেলা এবং মহকুমা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে কর্মচারীদের আসা-যাওয়া এখন যেন কোনও নিয়মের মধ্যেই পড়ে না। অধিকাংশ কর্মীর সময়ের মধ্যে অফিসে উপস্থিত থাকার কোনও আগ্ৰহই নেই। ওই সমস্ত কর্মীরা ছুটি কাটাতে পারলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন। সরকারি কর্মীরা রবিবার ও চতুর্থ শনিবার সহ ১০৮ দিন বিভিন্ন উৎসব পার্বণে ছুটি উপভোগ করে থাকেন। ছুটির দিন ছাড়াও অনেক কর্মচারীকে বিভিন্ন ছুতোয় আন অফিশিয়াল ছুটি উপভোগ করতেও দেখা যায়।

কর্মচারীদের এহেন দায়সারা মনোভাবের জন্য অফিসগুলোতে ফাইলের গাদা জমতে থাকে। সরকারি কার্যালয়ে বিশেষ কাজে এসে সাধারণ মানুষকে হিমসিম খেতে হয়। ছুটতে হয় এক দরজা থেকে অন্য দরজায়।

এহেন পরিস্থিতির ফায়দা তুলে একাংশ কর্মচারী ও দালালরা(মধ্যভোগী)মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিতে শুরু করে ওই সব মানুষের প্ৰয়োজনীয় কাজ দ্ৰুত সেরে ফেলার আশ্বাস দিয়ে।

রাজ্য সরকারের কাজ আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে করে অবসর নেওয়া বহু সরকারি কর্মী বলেছেন,সরকারি কার্যালয়ে এধরনের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সোনোয়াল সরকারকে কড়া হাতে লাগাম কষে ধরার এটাই উপযুক্ত সময়।

‘যে সমস্ত কর্মীরা নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করছেন সরকারের উচিত তাদের পুরস্কৃত করা। তবে যারা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে তাদের শাস্তি দেওয়া সরকারেরই কর্তব্য’। যারা কাজে ফাঁকি দিচ্ছে তাদের মুখোশ খুলে দিতে প্ৰতিটি কার্যালয়ে একজন করে কঠোর মনোভাবের কর্মী রাখা উচিত-বলেন একজন অবসরপ্ৰাপ্ত আমলা। তিনি আরও বলেন,নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক সমীকরণের কথা ভেবে সরকার তাদের ফাঁকিবাজ কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সাহস দেখায় না। ‘পাঁচ লক্ষেরও বেশি কর্মী একটা প্ৰধান ভোট ব্যাংক। তবে রাজনীতি না কর্মসংস্কৃতি কোনটাকে অগ্ৰাধিকার দেওয়া উচিত সেই সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে’-বলেন আরও একজন অবসরপ্ৰাপ্ত কর্মী।

অধিক খবরের জন্য ভিডিও দেখুন: Public staged massive rally against NGO Ghanshyam Seva Samiti in Tinsukia

logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com