গুয়াহাটিঃ রাজ্যে বন্যায় আরও দুজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এই নিয়ে চলতি মরশুমের প্ৰলয় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৯ জনে দাঁড়ালো। এরআগে ভূমিস্খলনে দুজন প্ৰাণ হারিয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মায়ং-এ একজন এবং ধেমাজিতে জলে ডুবে একজন মারা গেছেন। এদিকে ভুটানে অবিশ্ৰান্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নিম্ন অসমে বন্যা পরিস্থিতি ফের জটিল রূপ নিয়েছে। কোকরাঝাড়ে গৌরাং নদী বিপদ সঙ্কেতের উপর দিয়ে বইছে। বরপেটা রোড ব্ৰিজের কাছে বেকি এবং কামরূপের এনএইচ রোড ক্ৰসিঙের কাছে পুঠিমারি বইছে বিপদ সঙ্কেতের ওপর দিয়ে। ওদিকে যোরহাটের নিমাতিঘাট এবং ধুবড়িতে ব্ৰহ্মপুত্ৰ এখনও বিপদ সঙ্কেতের ওপরে রয়েছে। করিমগঞ্জে কুশিয়ারা এবং শোণিতপুর জেলার এমটি রোড ক্ৰসিঙে জিয়া ভরলিও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে।
এদিকে সোমবার রাত থেকে প্ৰচণ্ড বৃষ্টির জন্য এনএফ রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনে ট্ৰেন চলাচল ব্যাহত হয়। বৃষ্টি এবং বজ্ৰপাতের জন্য বানরহাট,হাসিমারা,চৌতারা,জোরাই,শ্ৰীরামপুর,ডাংতল এবং অন্যান্য কিছু স্থানে সিগন্যালিং এবং টেলি যোগাযোগ সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির জলে জোরাই স্টেশনে রেল লাইন ডুবিয়ে দিয়েছে। গোসাইগাঁও-শ্ৰীরামপুর-জোরাই সেকশনের অন্যান্য কয়েকটি স্থানে রেললাইন ধসে গেছে। হাসিমারা-মাদারহাট,ঘোকসাডাঙা-সাজেরপুর এবং সালেকাঠি-বাসুগাঁও সেকশনের মধ্যে বিভিন্ন সিগন্যাল এবং টেলি যোগাযোগ সরঞ্জাম অকেজো হয়ে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। লাগাতার বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় আলোর অভাব দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও যোগা্যোগ বিভ্ৰাট এবং যাত্ৰী সাধারণের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কিছু ট্ৰেন ডিভিশনের বিভিন্ন স্টেশনে থামিয়ে রাখা হয়েছে। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে এখবর। কিছু এলাকায় গতি কমিয়ে ট্ৰেন পুনরায় চালানোর ব্যবস্থা করেছেন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার বিকেল ৪.৪৫ মিনিট নাগাদ আপ লাইনে ট্ৰ্যাক ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। তবে ডাউন লাইন ট্ৰেন চলাচলের যোগ্য হয়ে ওঠেনি এখনও। জোরাই স্টেশন ইয়ার্ডে বৃষ্টির জল আটকে থাকায় আপ এবং ডাউন উভয় লাইনই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্ৰস্ত হয়েছে। গতকাল বেলা ১.৪৫ মিনিট নাগাদ এই লাইনে ট্ৰেন চলাচল স্থগিত রাখতে হয়। পরে আপ লাইনে সিঙ্গল লাইন সিস্টেমে ট্ৰেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয় বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে প্ৰকাশ। মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যের ১৯ জেলার ৬৮টি রাজস্ব সার্কলের ২৫২৩টি গ্ৰামে বন্যপীড়িত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৮,০১,৩২৯ জন। ক্ষতিগ্ৰস্ত জেলা সমূহের তালিকায় আছে ধেমাজি,লখিমপুর,দরং,বাকসা,নলবাড়ি,বরপেটা,চিরাং,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,ধুবড়ি,দক্ষিণ শালমারা,গোয়ালপাড়া,কামরূপ,কামরুপ(মেট্ৰো),মরিগাঁও,নগাঁও,গোয়ালপাড়া,যোরহাট এবং কাছাড়।
বর্তমানে দরং,বরপেটা,চিরাং,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,ধুবড়ি,গোয়ালপাড়া,কামরূপ,মরিগাঁও,নগাঁও,গোলাঘাট এবং যোরহাট জেলায় ৬৫৯টি ত্ৰাণ শিবির কর্মক্ষম রয়েছে। এই শিবিরগুলোতে আশ্ৰিতের সংখ্যা ১,০৩,৯৩৪ জন। দরং,বরপেটা,বঙাইগাঁও,কোকরাঝাড়,ধুবড়ি,দক্ষিণ শালমারা,মরিগাঁও এবং গোলাঘাটে ১২৩টি ত্ৰাণ বণ্টন কেন্দ্ৰ এখনও কাজ করছে।
এদিকে পুব অসম ওয়াইল্ড লাইফ ডিভিশন,কাজিরঙার ডিএফও জানিয়েছেন,বন্যার জল আনুমানিক ১৫৫ সেন্টিমিটার নেমেছে। উদ্যানের ২৭টি শিবির এখনও জলমগ্ন রয়েছে। গত ১৩ জুলাই থেকে উদ্যানে ২০৪টি জীবজন্তুর মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় ২২১ বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং আংশিক ক্ষতিগ্ৰস্ত বাড়ির সংখ্যা ৩৯৯৮টি।
অন্যান্য খবরের জন্য পড়ুনঃ অসমে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬৭,জল কমছে,স্বাভাবিক অবস্থা এখনও ফিরেনি