নাগরিক পঞ্জি নবায়ন নিয়ে হাজেলাকে কাঠগড়ায় তুলল শাসক শিবির

নাগরিক পঞ্জি নবায়ন নিয়ে হাজেলাকে কাঠগড়ায় তুলল শাসক শিবির
Published on

গুয়াহাটিঃ রাষ্ট্ৰীয় নাগরিক পঞ্জি(এনআরসি)নবায়ন ইস্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় তুমুল বিতর্ক চলে। সৃষ্টি হয় এক হুলুস্থুল পরিবেশের। নাগরিক পঞ্জির খসড়ায় থেকে যাওয়া যাবতীয় ভুল ত্ৰুটির দায় এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক প্ৰতীক হাজেলার ওপর চাপিয়ে শাসক দল রি ভেরিফিকেশনের জোরালো দাবি তোলে। রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে হাজেলা মুখ বন্ধ খামে রিপোর্ট পেশ করে সুপ্ৰিমকোর্টকে বিপথে পরিচালিত করছেন এমন অভিযোগও ওঠে বিধানসভায়। খসড়া রিভেরিফিকেশনের জন্য এনআরসি প্ৰকাশের সময় বাড়ানোরও দাবি ভোলা হয়েছে শাসক দলের তরফ থেকে। তবে কংগ্ৰেস ও এআইইউডিএফ রিভেরিফিকেশনে সায় দেয়নি। ইস্যুটি নিয়ে বাক বিতন্ডা চলাকালে বিরোধীদের তরফ থেকে বলা হয়,সুপ্ৰিমকোর্টের বিশেষ তত্ত্বাবধানে নাগরিক পঞ্জির কাজ চলছে। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এনআরসি প্ৰকাশ হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জেলাগুলিতে ব্যাপক সংখ্যক বিদেশির নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আশঙ্কা করে কেন্দ্ৰ ও রাজ্য সরকার খসড়া রি ভেরিফিকেশনের আর্জি জানিয়েছিল। কিন্তু এনআরসি-র রাজ্য সমন্বয়ক প্ৰতীক হাজেলার দাবি মেনে শীর্ষ আদালত ওই আর্জি খারিজ করে দেয়। সরকারের মতে একটা নির্ভুল ও ত্ৰুটিহীন নাগরিকপঞ্জির জন্য খসড়া রিভেরিফিকেশন অত্যন্ত জরুরি।

এদিন জিরো আওয়ারে বিজেপি বিধায়ক দেবানন্দ হাজরিকা,শিলাদিত্য দেব ও নোমল মুমিন বিধানসভায় নাগরিক পঞ্জি নবায়নের ইস্যুটি উত্থাপন করেন। খসড়ায় ত্ৰুটি রয়ে গেছে বলে সরকারের পক্ষে থেকে সংশয় ব্যক্ত করা হয়। আর এর জন্য রিভেরিফিকেশনের প্ৰয়োজন এবং চূড়ান্ত খসড়া প্ৰকাশের সময় বাড়ানোর আর্জি জানানো হয় সরকারের পক্ষ থেকে। ইস্যুটি নিয়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি রিভেরিফিকেশনের সময় সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দাবিটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য শীর্ষ আদালতের কাছে আর্জি জানান। পাটোয়ারি এক পরোক্ষ ইঙ্গিত দিয়ে বলেন,এনআরসি থেকে স্থানীয় ভূমি পুত্ৰদের নাম বাদ পড়লে আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। তখন পরিস্থিতি সামলানোর দায়িত্ব বর্তাবে সরকারের ওপর,হাজেলার নয়। এনআরসিতে ত্ৰুটি থেকে যাওয়ার সন্দেহে পাটোয়ারি হাজেলাকেই এদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করান।

এদিকে কংগ্ৰেস ও এআইইউডিএফ-এর তরফে বলা হয়,খসড়ায় বিদেশির নাম ঢুকেছে বলে বিধানসভায় যে নেতিবাচক বার্তা ছড়ানো হচ্ছে চূড়ান্ত তালিকা প্ৰকাশের পর তা ক্ষতিকারক হতে পারে। পাটোয়ারি বলেন,‘সুপ্ৰিমকোর্টের নির্দেশ মেনে এনআরসি নবায়নের কাজে রাজ্য সরকার ১,২০০ কোটি টাকা দিয়েছে,৫৫ হাজার কর্মী,অফিসার নিয়োগ করেছে। কিন্তু খসড়া কতটা ত্ৰুটিহীন হয়েছে সে বিষয়ে আমাদের সংশয়ে রয়েছে’। ২০১১ সালের জনগণনা অনু্যায়ী সে সব জেলায় জনসংখ্যা অস্বাভাবিক বেড়েছে সেই সব জেলায় বেশি লোকের নাম ঠাঁই পেয়েছে খসড়ায়। তাই খসড়া রিভেরিফিকেশন অত্যন্ত জরুরি। তাঁর কথা হলো,ত্ৰুটিপূর্ণ ও বিদেশির নাম থাকা খসড়া প্ৰকাশিত হলে রাজ্যে অশান্তি দেখা দিতে পারে। তাই একটা শুদ্ধ নাগরিক পঞ্জির পক্ষপাতী সরকার।

শাসক শিবিরের মতে,বাংলাদেশ সীমান্ত জেলাগুলিতে ১৮ শতাংশ লোকের নাম বাদ পড়েছে খসড়া থেকে। শাসক দলের একটা গোষ্ঠী বলেন,এনআরসিতে যথেষ্ট ফাঁকফোকড় ও ত্ৰুটি রয়ে গেছে। তাঁরা হাজেলার ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্ৰকাশ করেন। বিজেপি বিধায়ক দেবানন্দ হাজরিকা বলেন,বহু প্ৰকৃত ভারতীয়র নাম খসড়ায় ঠাঁই পায়নি। অন্যদিকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাগুলির ৯৬ শতাংশ লোকের নাম খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এতে মনে হচ্ছে,হাজেলা উদ্দেশ্যপ্ৰণোদিতভাবে কাজ করছেন-অভিযোগ করেন তিনি।

বিজেপি বিধায়ক নোমল মোমিন বলেন,পাহাড়ি জেলাগুলির ১৮ শতাংশ মানুষের নাম খসড়া থেকে বাদ পড়েছে। অথচ বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় মাত্ৰ ৫ শতাংশের নাম ওঠেনি খসড়ায়। এতে স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহ জাগার কথা। তাই ২৭ শতাংশ রিভেরিফিকেশন হয়েছে বলে হাজেলা শীর্ষ আদালতকে ফিসের ভিত্তিতে বললেন জানতে চান মোমিন।

হোজাইয়ের বিজেপি বিধায়ক শিলাদিত্য দেব হাজেলার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বলেন,এটা নিছকই একটা ‘ওয়ান ম্যান শো’ চলছে। তাঁর কথায় মুখ্যমন্ত্ৰী,স্বরাষ্ট্ৰমন্ত্ৰী ও প্ৰধানমন্ত্ৰীর কি কোনও দায়বদ্ধতা নেই সাধারণ লোকেদের প্ৰতি? তাদের দূরে সরিয়ে কাজ করা হচ্ছে কেন? তিনি বলেন,হাজেলা যা বলেছেন সেই মতো কাজ হচ্ছে। হাজেলা কোনও কিছুই সরকারের সঙ্গে শেয়ার করছেন না। নাগরিক পঞ্জি নবায়নে সরকার ১,২০০ কোটি দিয়েছে। অথচ সেখানেও ওয়ান ম্যান শো চলছে। শীর্ষ আদালত নাগরিকত্ব প্ৰমাণে ১৪টি নথি গ্ৰহণযোগ্য বলে জানিয়েছে,কিন্তু হাজেলা সেখান থেকেও ৫টি নথি বাদ দিয়েছেন। মনে হচ্ছে হাজেলা কারো এজেন্ডা পূরণেই কাজ করছেন। সীমান্ত জেলাগুলিতে ৯৬ শতাংশ লোকের নাম খসড়ায় ঢুকেছে,বাকি জেলাসমূহে বাদ পড়েছেন ২০ শতাংশ। একাংশ বিদেশি নাগরিকই নাগরিক পঞ্জির কাজ করছেন। এভাবে নাগরিক পঞ্জি হলে আখেরে অসমিয়া জাতীর অস্তিত্ব বিপন্ন হবে-বলেন দেব।

অগপ বিধায়ক প্ৰদীপ হাজরিকা,বিপিএফ-এর রবিরাম নার্জারি একটা সঠিক ও শুদ্ধ নাগরিক পঞ্জি প্ৰস্তুত করার ওপর গুরুত্ব দেন। প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত বলেন,মহেন্দ্ৰমোহন চৌধুরী ও আব্দুল মালিকের নাম এক সময় ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছিল। এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়।

logo
Sentinel Assam- Bengali
bengali.sentinelassam.com